বিশ্ব বাজারে জ্বালানী তেলের সংকট
Advertisements

ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধ অব্যাহত থাকায় এবং বৈশ্বিক জ্বালানী পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিশ্বের তেল বাজারে ইরান ও ভেনিজুয়েলাকে ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছে ফ্রন্স।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যকরনের দফতর জানিয়েছে, ফ্রান্স বিশ্ব বাজারে ইরান এবং ভেনিজুয়েলার তেল সরবরাহ করতে চায় এবং এমন একটি প্রক্রিয়া ব্যবহার করতে চায় যাতে তেলের মূল্য রাশিয়ার উৎপাদনের ওপর নির্ভর করতে না হয়।

ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এবং রাশিয়ার উপর ব্যাপকমাত্রায় পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা আরোপ হওয়ার পর থেকে বিশ্ববাজারে তেলের দাম ১২০ ডলারে পৌঁছেছে যা গত বছরের তুলনাায় প্রায় দ্বিগুণ। এর ফলে বিশ্বে বিশেষ করে ইউরোপের দেশগুলোতে তেল ও তেল জাতীয় পণ্যের দাম অনেক বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে এসব দেশে মূল্যস্ফীতি ব্যাপকমাত্রায় বেড়ে গেছে এবং আসন্ন শীতকালে জ্বালানি সংকট নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।

প্রকৃতপক্ষে, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক খাতে নিষেধাজ্ঞা নীতির বাস্তবায়ন দীর্ঘকাল ধরে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে পশ্চিমা নীতি অনুসরণ করতে বাধ্য করার একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোর মতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরান ও ভেনিজুয়েলা তেল রপ্তানির ওপর ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

মার্কিন সরকার এসব নিষেধজ্ঞার মাধ্যমে ইরান এবং ভেনিজুয়েলাকে একঘরে করার চেষ্টা করেছে। তবে দুটি দেশ প্রতিরোধীকামী অর্থনীতিসহ প্রজ্ঞাপূর্ণ বিভিন্ন অর্থনৈতিক নীতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে এসব নিষেধাজ্ঞার নেতিবাচক প্রভাব কমিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। এমনকি বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল এবং ইন্টারন্যাশনাল ফিনান্স ইনস্টিটিউটের মতো স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদন অনুসারে বর্তমানে ইরানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক হিসেবে অনুমান করা হয়েছে এবং এবং তা ২ থেকে প্রায় ৬ শতাংশের মধ্যে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

ইরানের পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী জাভেদ ওজি এ প্রসঙ্গে জোর দিয়ে বলেছেন: “সাম্প্রতিক ঘটনাবলী এবং এই অঞ্চল এবং এর বাইরের দেশগুলোর সাথে ইরানের শক্তিশালী কূটনীতি প্রমাণ করে যে ইরানের বিরুদ্ধে অবৈধ এবং নিপীড়নমূলক নিষেধাজ্ঞা ব্যর্থ হয়েছে এবং তেল ও তেল জাতীয় পণ্যের উৎপাদন ও রপ্তানিতে কোনও প্রতিব্ন্ধকতার সৃষ্টি হয় নি। তিনি আরো বলেন বিশ্ব ভালভাবেই জানে যে ইরান মোট তেল ও গ্যাস মজুদের প্রথম দেশ হওয়ার মাধ্যমে বিশ্ব জনগোষ্ঠীর জ্বালানি চাহিদার একটি বড় অংশ তেহরান সরবরাহ করতে সক্ষম।

এদিকে, ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোও ঘোষণা করেছেন যে ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ২০২১ হল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রথম বছর এবং কিছু কিছু ক্ষেত্র দেখে অনুমান করা হচ্ছে দেশটিতে ৫ ভাগ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।

মূলত বর্তমান পরিস্থিতির দিকে লক্ষ্য করলে এটা প্রমাণ হয় যে ইরান বা ভেনিজুয়েলার উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নীতির ফলে আন্তর্জাতিক জ্বালানি বাজারে বিদ্যমান সমস্যাগুলোকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। বিশেষ করে এখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং রাশিয়ার তেল ও গ্যাস রপ্তানি বন্ধের সাথে সাথে আমেরিকা এবং তার পাশ্চাত্য মিত্রের জন্য ইরান এবং ভেনিজুয়েলার মাধ্যমে তেল সরবরাহের প্রয়োজনীয়তা আরো ব্যাপাক আকারে দেখা দিয়েছে। এ কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে তেল সরবরাহের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ভেনিজুয়েলার সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। আর দ্বিপাক্ষিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে আমেরিকার একটি প্রতিনিধি দল ইতিমধ্যেই ভেনিজুয়েলায় পৌঁছেছে।

বিশ্ববাজারে ইরানের প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে ইউরোপীয় কর্মকর্তারাও এখন বিবেচনা করছেন যার ফল শ্রুতিতে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাকরন বিশ্ব বাজারে ইরানের তেল ফিরিয়ে আনার দাবি করেছেন।

Advertisements