আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর পরিচালনায় তুরস্কের সাথে চুক্তির কাছাকাছি পৌঁছেছে তালেবান।
শনিবার(২৮ আগস্ট) তুরস্ক ও তালেবানের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় সংশ্লিষ্ট দুইটি সূত্র ব্রিটেনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আইকে এই তথ্য জানায়।
দুই পক্ষের মধ্যে খসড়া চুক্তি অনুযায়ী, তুরস্ক ও কাতার যৌথভাবে বিমানবন্দর পরিচালনা করবে। অপরদিকে বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে তুরস্ক।
মঙ্গলবার আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে বহুজাতিক বাহিনীর প্রত্যাহার সম্পন্ন হওয়ার পরেই এই চুক্তি চূড়ান্ত করা হবে বলে জানানো হয়।
তবে চুক্তির বিষয়ে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান তার ন্যাটো মিত্রদের সাথে বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আলোচনা করবেন।
বিগত কয়েক সপ্তাহ থেকেই তুরস্ক আফগানিস্তান থেকে মার্কিন বাহিনীর প্রত্যাহার শেষ হওয়ার পর কাবুল বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্ব নেয়ার বিষয়ে চেষ্টা চালিয়ে আসছে।
এদিকে তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগান শুক্রবার জানিয়েছিলেন, তালেবান তুরস্কের কাছে কাবুল বিমানবন্দর পরিচালনায় সহায়তার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে। তবে নিরাপত্তার বিষয়ে বিবেচনা করেই এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন তিনি।
ইতোমধ্যেই বৃহস্পতিবার আফগানিস্তানে নিযুক্ত তুর্কি সামরিক বাহিনীর সদস্যরা তুরস্কে ফিরে গিয়েছেন।
তুরস্ক ও তালেবানের মধ্যে খসড়া চুক্তি অনুযায়ী :
১।তুরস্ক তালেবানকে আফগানিস্তানের বৈধ সরকার হিসেবে স্বীকৃতি দেবে।
২।তুরস্ক ও কাতার একযোগে বিমানবন্দর পরিচালনা করবে।
৩।আঙ্কারা বেসামরিক সংস্থার মাধ্যমে বিমানব্ন্দরে নিরাপত্তা সহায়তা দেবে, যার কর্মীরা হবে সাবেক তুর্কি সৈন্য ও পুলিশ।
৪।তুর্কি স্পেশাল ফোর্সের অতিরিক্ত সদস্য যারা বিমানবন্দরের টেকনিক্যাল খাতে সহায়তা দেয়া তুর্কি কর্মীদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে, তারা সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করবে এবং বিমানবন্দরের সীমানার বাইরে যেতে পারবে না।
এর আগে আশরাফ গনির নেতৃত্বাধীন সাবেক আফগান সরকার বিমানবন্দর পরিচালনায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাথে গত অক্টোবরে এক চুক্তি করেছিলো। তালেবানের বর্তমানে আমিরাতের সাথে ভিন্ন এক চুক্তি করা প্রয়োজন।
মিডল ইস্ট আই এই বিষয়ে তালেবানের বিভিন্ন মুখপাত্রের কাছে জানতে চাইলে তারা মন্তব্য করতে অস্বীকার করে বলেন, সংবাদমাধ্যমে এই বিষয়ে কথা বলার জন্য তাদের অনুমোদন নেই।
এদিকে আফগানিস্তান থেকে বিভিন্ন দেশের প্রত্যাহার কার্যক্রমের মধ্যেও তুরস্ক কাবুলে দেশটির দূতাবাস খোলা রেখেছে এবং রাষ্ট্রদূতসহ দূতাবাসের মূল কূটনীতিক কর্মীদের এখনো আফগানিস্তান থেকে সরিয়ে নেয়নি।
একইসাথে দূতাবাসের নিরাপত্তার জন্য তুর্কি স্পেশাল ফোর্সের সদস্যরাও নিয়োজিত রয়েছে।
বিগত কয়েক বছর থেকেই তুরস্ক কাবুলের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে আসছিলো।
আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসনের পর ২০০২ সালে ন্যাটোর সদস্য হিসেবে দেশটিতে আসে তুর্কি সৈন্যরা। তবে তুর্কি সৈন্যরা আফগানিস্তানে সরাসরি কোনো যুদ্ধে জড়িত না থেকে বিমানবন্দর ও অন্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানের নিরাপত্তার দায়িত্বেই ছিলো বলে তুরস্কের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়।
২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার জেরে আফগানিস্তানে আগ্রাসন চালায় মার্কিন বাহিনী। অত্যাধুনিক সমরাস্ত্রসজ্জ্বিত মার্কিন সৈন্যদের হামলায় আফগানিস্তানের তৎকালীন তালেবান সরকার পিছু হটে।
তবে একটানা দুই দশক যুদ্ধ চলে দেশটিতে।
দীর্ঘ দুই দশক আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের দখলের পর ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাতারের দোহায় এক শান্তিচুক্তির মাধ্যমে দেশটি থেকে মার্কিন বাহিনী প্রত্যাহার করতে সম্মত হয় ওয়াশিংটন। এর বিপরীতে আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অংশ নিতে তালেবান সম্মত হয়।
চুক্তি অনুসারে ক্ষমতাসীন থাকা মার্কিন সমর্থনপুষ্ট আফগান সরকারের সমঝোতার জন্য তালেবান চেষ্টা করলেও দুই পক্ষের মধ্যে কোনো সমঝোতা হয়নি। এর পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছর মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের মধ্যে পুরো দেশের নিয়ন্ত্রণে অভিযান চালাতে শুরু করে তালেবান। মে থেকে অভিযান শুরুর পর সাড়ে তিন মাসের মাথায় ১৫ আগস্ট রাজধানী কাবুলের অধিকার নেয় তালেবান যোদ্ধারা।
সূত্র : মিডল ইস্ট আই