দেশের বিভিন্ন স্থানে ৭ বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের নাম করে ৭ হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছে ওরিয়ন গ্রুপ। এক্ষেত্রে ৭ বিদ্যুৎকেন্দ্রের নামে ২৫০০ কোটি টাকা ও সরকারকে কোনো বিদ্যুৎ না দিয়ে ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেব ৪৫০০ কোটি টাকা নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
এই বিপুল পরিমানের অর্থ লোপাটের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেছে আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ। তাদের মধ্যে মির্জা আজম, আলাউদ্দিন নাসিম ও শামীম ওসমান উল্লেখযোগ্য। ওরিয়ন গ্রুপের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেই এই তিন জনের কারো না কারো শেয়ার ছিল।
নারায়ণগঞ্জের গোগন নগরে ‘ডিজিটাল পাওয়ার এন্ড এ্যাসোসিয়েটস লিমিটেড’ নামক ১০২ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ৬০ শতাংশ শেয়ার ছিল ওরিয়নের। বাকি ৪০ শতাংশ শেয়ারের মালিক ছিল আওয়ামী লীগ নেতা মির্জা আজম ও তার তিন ভাই মির্জা গোলাম কিবরিয়া, মির্জা গোলাম রাব্বানি ও মির্জা জিল্লুর রহমান।
সিদ্ধিরগঞ্জে ‘ডাচ বাংলা পাওয়ার এন্ড এ্যাসোসিয়েটস লিমিটেড’ নামক ১০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৭০ শতাংশ শেয়ারের মালিক ছিল ওরিয়ন গ্রুপ। বাকি ৩০ শতাংশ শেয়ারের মালিক ছিল আলাউদ্দিন আহমেদ নাসিম ও তার ভাই জামালউদ্দিন আহমেদ।
‘ওরিয়ন পাওয়ার সোনারগাঁও লিমিটেড’ নামে ১০৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রে শামীম ওসমানকে ৪ শতাংশ দিয়ে বাকি ৯৬ শতাংশ ভোগ করেছে ডিজিটাল পাওয়ার এন্ড এ্যসোসিয়েটস লিমিটেড। এই ডিজিটাল পাওয়ার এন্ড এ্যাসোসিয়েটস লিমিটেডে মালিকানায় ছিল ওরিয়ন গ্রুপ, মির্জা আজম ও তার তিন ভাই।
খুলনায় ‘ওরিয়ন পাওয়ার রূপসা লিমিটেড’ এর ১১০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতায়ও যৌথ মালিকানায় আছে ডিজিটাল পাওয়ার এন্ড এ্যাসোসিয়েটস। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকানায়ও ওরিয়ন গ্রুপের সাথে ছিল মির্জা আজম ও তার তিন ভাই।
মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় ‘ওরিয়ন পাওয়ার ইউনিট ২, ঢাকা’ ৬৩৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতায় বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকানায় রাখা হয় চীনের ফুজিয়ান লং এনার্জি কোম্পানি লিমিটেড ও দুবাইয়ের ফার্স্টজেন এনার্জি নামের দুই কোম্পানি। কিন্তু অবাক করার বিষয় হলো এই দুই বিদেশি কোম্পানির মালিক ওরিয়ন গ্রুপের ওবায়দুল করিম ও তার ছেলে সালমান ওবায়দুল করিম। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ১ হাজার ৭৬ কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ নিলেও এখন পর্যন্ত কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হয়নি।
ওরিয়ন পরিবারের মালিকানাধীন সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রেও চীন ও দুবাইয়ের সেই দুই প্রতিষ্ঠানের শেয়ার রয়েছে। মূলত এই দুই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে টাকা পাচার করা হয়। তবে ‘ওরিয়ন পাওয়ার মেঘনাঘাট লিমিটেড’ বিদ্যুৎকেন্দ্রের একক মালিকানায় রয়েছে ওরিয়ন গ্রুপ।
এই ৭ টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নামে বিভিন্ন সময় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে ৫২৩৩ কোটি টাকা। এই ঋণ উত্তোলনে সহযোগী ছিল বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকানায় থাকা আওয়ামী লীগ নেতারা। এছাড়া এসকল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে সরকার থেকে নিয়েছে ৪৫২৫ কোটি টাকা।
বিশ্লেষকরা বলেছেন, বিদ্যুৎখাত নিয়ে ওরিয়ন গ্রুপ যে নৈরাজ্য করেছে তা অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে। কেননা, এসকল প্রকল্প তারা জনগণকে বিদ্যুৎ দেওয়ার জন্য করে নি। বরং অর্থ লোপাট করার জন্য করেছে। ট্যারিফ বহির্ভূত যে অর্থ তারা নিয়েছে সেগুলো ফিরিয়ে আনতে হবে।
উল্লেখ্য, ওরিয়ন যখন যে রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসে তাদেরই পার্টনার বানিয়ে এপর্যন্ত ১১৪১৯ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। যেখানে খেলাপি ঋণের পরিমান ১২৩৯ কোটি টাকা।