বাংলাদেশে দুর্গাপূজায় সহিংসতা নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেল কেন
Advertisements

বাংলাদেশে অতীতে নানা ঘটনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের উপর হামলা বা আক্রমণের ঘটনা যেমন ঘটেছে, কখনো কখনো মন্দির বা পূজার প্রস্তুতিকালীন সময়ে প্রতিমা ভাংচুরের বিচ্ছিন্ন ঘটনাও ঘটেছে।

কিন্তু এবার দুর্গাপূজার সময়ে যেভাবে ব্যাপক মাত্রায় হামলা ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, এমনটা সাম্প্রতিককালে দেখা যায়নি।

এতো সহিংসতার জন্য প্রশাসনের ব্যর্থতাকেই দায়ী করছে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ।

পূজা উদযাপন পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় সম্পাদক নির্মল চ্যাটার্জি বিবিসি বলছেন, পূজার আগেই তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সব বাহিনীর সাথে বৈঠক করেছিলেন এবং সেসব বৈঠকে নিরাপত্তার বিষয়ে তাদের আশ্বাসও দেয়া হয়েছিলো।

তিনি বলেন, “আমরা সরকারকে, প্রশাসনকে বারবার বলেছি যে এই ঘটনা সাম্প্রদায়িক অপশক্তি করছে। তাদের পক্ষ থেকে বারবার আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছিলো। কিন্তু আমরা দেখলাম দেবালয়ের সাথে যারা সম্পৃক্ত তাদের হত্যা করা হলো। দেবালয় ধ্বংস করা হলো। আমার মনে হয় প্রশাসনের কোথাও কোন গাফলতি থাকতে পারে। না হলে এমন অবস্থা এসময়ে হওয়ার কথা না।”

মিঃ চ্যাটার্জি বলেন এ ঘটনা একটি রাজনৈতিক ব্যর্থতাও এটা হতে পারে।

“সরকার, দল ও প্রশাসন আছে-সকলে মিলেই এটা দেখবে। আমরা তাদের কাছেই আবেদন করেছি। আমাদের আশ্বস্ত করেছিলো। আমাদের নেতৃবৃন্দ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে গিয়েছিলো, তাদের দ্বারস্থ হয়েছিলো। কিন্তু তারা যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারেনি”।

মিঃ চ্যাটার্জি বলছেন, হামলার সময়ে বাধা না দিয়ে বরং হিন্দুদের প্রতিবাদ কর্মসূচিতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে নোয়াখালীতে। এমনকি যেসব জায়গায় হামলার আশঙ্কা ছিলো সেখানকার হিন্দু সম্প্রদায়ের

অন্যদিকে বুধবার কুমিল্লার মণ্ডপ-মন্দিরে হামলার পর ২২ জেলায় বিজিবি মোতায়েনর পরেও হিন্দুদের উপর হামলা হয়েছে প্রকাশ্যেই। সরকার কেন তা ঠেকাতে পারলো না?

এমন প্রশ্নের জবাবে মানবাধিকার সংগঠক নূর খান লিটন বলছেন, হিন্দুরা কখনোই তাদের ওপর হামলার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত ও শাস্তি পেতে দেখেন না, বরং হামলাকারীরা অনেক সময় পরবর্তীতে পুরস্কৃতও হয় দল বা রাজনৈতিক অঙ্গনে।

তিনি বলেন, হিন্দুদের ওপর হামলা নিয়ে যতটা রাজনীতি হয় তাদের সুরক্ষা দেয়ার ততটা আগ্রহ কারও মধ্যে দেখা যায় না।

তিনি বলেন, “এদেশে একের পর এক ঘটনা হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর ঘটেই চলেছে। কিন্তু সেই ঘটনাগুলোর বিচার হতে দেখিনা। ঘটনাগুলো নিয়ে রাজনীতি হয়, ফায়দা হাসিলের চেষ্টা হয় এগুলো ব্যবহার করে। লামার (বান্দরবানে) যে ঘটনা ঘটেছে, কুমিল্লার ঘটনার পর সেখানে সরকারি দলের নেতাকে উপস্থিত হতে দেখেছি তৌহিদী জনতার ব্যানারে। নাসিরনগরে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছিলো তাদের ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী হতে দেখেছি- যদিও সমালোচনার মুখে প্রত্যাহার করেছে”।

নূর খান লিটন বলেন, ”আজ পর্যন্ত এ ঘটনাগুলোর বিচার না হওয়ার ফলে সমাজে এমন কোন বার্তা সরকার দিতে পারছে না যে এ ধরণের ঘটনা ঘটিয়ে পার পাওয়া যাবে না বা যায় না”।

অন্যদিকে বুধবার কুমিল্লার মণ্ডপ-মন্দিরে হামলার পর ২২ জেলায় বিজিবি মোতায়েনর পরেও হিন্দুদের উপর হামলা হয়েছে প্রকাশ্যেই। সরকার কেন তা ঠেকাতে পারলো না?

এমন প্রশ্নের জবাবে মানবাধিকার সংগঠক নূর খান লিটন বলছেন, হিন্দুরা কখনোই তাদের ওপর হামলার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত ও শাস্তি পেতে দেখেন না, বরং হামলাকারীরা অনেক সময় পরবর্তীতে পুরস্কৃতও হয় দল বা রাজনৈতিক অঙ্গনে।

তিনি বলেন, হিন্দুদের ওপর হামলা নিয়ে যতটা রাজনীতি হয় তাদের সুরক্ষা দেয়ার ততটা আগ্রহ কারও মধ্যে দেখা যায় না।

তিনি বলেন, “এদেশে একের পর এক ঘটনা হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর ঘটেই চলেছে। কিন্তু সেই ঘটনাগুলোর বিচার হতে দেখিনা। ঘটনাগুলো নিয়ে রাজনীতি হয়, ফায়দা হাসিলের চেষ্টা হয় এগুলো ব্যবহার করে। লামার (বান্দরবানে) যে ঘটনা ঘটেছে, কুমিল্লার ঘটনার পর সেখানে সরকারি দলের নেতাকে উপস্থিত হতে দেখেছি তৌহিদী জনতার ব্যানারে। নাসিরনগরে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছিলো তাদের ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী হতে দেখেছি- যদিও সমালোচনার মুখে প্রত্যাহার করেছে”।

নূর খান লিটন বলেন, ”আজ পর্যন্ত এ ঘটনাগুলোর বিচার না হওয়ার ফলে সমাজে এমন কোন বার্তা সরকার দিতে পারছে না যে এ ধরণের ঘটনা ঘটিয়ে পার পাওয়া যাবে না বা যায় না”।

মিস্টার খান লামার যে ঘটনার কথা উল্লেখ করেছেন সেখানে মন্দিরে হামলার ঘটনায় স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধির নাম এসেছে গণমাধ্যমে।

আর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে সম্প্রতি ইউনিয়ন নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগ থেকে এমন দুজনকে প্রথমে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিলো, যারা নাসিরনগরে হিন্দুদের ওপর আক্রমণের জন্য দায়ের করার মামলার আসামি ছিলেন।

পরে সমালোচনার মুখে তাদের মনোনয়ন বাতিল হলেও ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গেই এখনো আছেন তারা।

কিন্তু এবার কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে কোরআন পাওয়ার ঘটনার পর সেখানে দিনভর পূজাবিরোধী যেসব মিছিল সমাবেশ এবং এগুলো থেকে একের পর এক মন্দিরে হামলার চেষ্টা হয়েছে।

জেলার পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি তাতে আওয়ামী লীগসহ সব দলেরই সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ করেছিলেন বিবিসির কাছে।

আবার কুমিল্লার ঘটনার পর ওই দিনই চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে ও পরে সারাদেশে এ সহিংসতার জের ধরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলো কেন বা সরকার ব্যর্থ হলো?

এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ডঃ আব্দুর রাজ্জাক বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, সরকার ব্যর্থ হয়নি বরং সরকারের সব প্রস্তুতি সত্ত্বেও পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে।

“রাষ্ট্র ব্যর্থ এভাবে বলা যাবে না। রাষ্ট্র যদি উদাসীন থাকতো, তাহলে কোন পদক্ষেপ বা ভূমিকা নিতো না। দুর্ঘটনা তো হতেই পারে। আমরা যদি নীরব থাকি তাহলে বলতে পারতেন যে ব্যর্থ হয়েছে। রাষ্ট্র তো নীরব ভূমিকা পালন করছে না। এই তের বছরে দেখেন এই প্রথম দুর্গাপূজায় এমন সহিংসতা হলো। তার মানে আমাদের প্রস্তুতি ছিলো না? প্রস্তুতি ছিলো। তারপরেও সুপরিকল্পিতভাবে একটা মিথ্যা, বানোয়াট এবং ভিত্তিহীন সাজানো ঘটনা ঘটানো হয়েছে। আমি মনে করি এটা হঠাৎ করেই হয়েছে কিন্তু সুপরিকল্পিতভাবে,” বলছেন মি.রাজ্জাক।

কিন্তু তারপরেও কুমিল্লার ঘটনার পর দেশের প্রায় অর্ধেক জেলায় বিজিবি মোতায়েনসহ নানা ব্যবস্থা নিয়েও কেন পরবর্তী সহিংসতা ঠেকানো গেলো না কিংবা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে সরকারের নেয়া ব্যবস্থা কতটা কার্যকর হয়েছে তা নিয়েই এখন প্রশ্ন উঠছে।

আবার ঘটনাগুলো তাৎক্ষণিকভাবে দেশের গণমাধ্যমে উঠে না আসা এবং সহিংসতার সময় ইন্টারনেট সেবা ব্যাহত করার মতো বিষয়গুলোও পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণের বাইরে ঠেলে দিতে ভূমিকা রেখেছে কি-না, সে প্রশ্নও উঠছে মানবাধিকার কর্মী ও হিন্দু সম্প্রদায়ের দিক থেকেও।

সূত্রঃ বিবিসি

Advertisements