গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালানোর পরেও দলটির পতিত নেতাদের কব্জায় এখনো প্রাথমিক শিক্ষার নানা খাত। নেতাদের অদৃশ্য ইশারায় চলছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই)। ২০১৮ সালে দিনের ভোট রাতে করে আলোচিত এবং নওগাঁর সাওতাল পল্লীতে হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা (ঐ সময়ের ডিসি) আব্দুস সামাদ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) হিসেবে এখনো আওয়ামী লীগ নেতাদের সুপারিশের ভিত্তিতে নিয়োগ ও পদোন্নতি দিচ্ছেন। এ নিয়ে ডিপিইর কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। আওয়ামী লীগের পেতাত্মা হিসেবে খ্যাত ডিজি আব্দুস সামাদের পদত্যাগের দাবিতে গত ১০ দিন ধরে মিরপুরের প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরে বিক্ষোভ করছেন কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। সবাই বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নেয়ায় গত ১০ দিন ধরেই ডিপিইর নিয়মিত কাজে নেমে এসেছে স্থবিরতা।
এ দিকে জানা গেছে, হাসিনা সরকারের পতনের পরে আওয়ামী লীগ নেতা ও স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য মাইনুল ইসলাম খান নিখিলের সুপারিশের (ডিও লেটার ১৩ মে ২০২৪ তারিখে ইস্যুকৃত) ভিত্তিতে ১৫ আগস্ট তারিখে এক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিয়ে মাঠপর্যায় থেকে অধিদফতরে পদায়ন করেন ডিজি আবদুস সামাদ। এ নিয়ে কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। জনরোষ থেকে বাঁচতে গত ১০ দিন অধিদফতরে নিজ কর্মস্থলেও আসছেন না তিনি। ডিপিইর কর্মকর্তাদের অভিযোগ, স্বজনপ্রীতির কারণে ডিজি আব্দুস সামাদ আওয়ামীপন্থী কর্মকর্তাদের পছন্দের জায়গা ও বিভাগে পদায়ন করেছেন। অন্য দিকে রাজনৈতিক পরিচয় চিহ্নিত করে সরকারবিরোধী তকমা লাগিয়ে ত্যাগী মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তাদের কোণঠাসা করেছেন সব সময়।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে মিরপুরে ডিপিইর প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, পুরাতন ভবন ও নতুন ডিজি ভবনের মাঝখানে খোলা জায়গায় অবস্থান নিয়ে সেøাগানে সেøাগানে মুখরিত করে তুলেছেন সব শ্রেণীর কর্মকর্তারা। দুইটি ভবনের বিভিন্ন ফ্লোরে গিয়ে দেখা যায় সব টেবিল ফাঁকা। পুরাতন ভবনের তৃতীয়তলায় সাংবাদিক পরিচয় জানতে পেরে এক পিয়ন এসে জানালেন কোনো স্যারেরাই গত এক সপ্তাহ ধরে কোনো কাজ করছেন না। বর্তমান ডিজির অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত কেউ কোনো কাজ করবে না বলেও ঘোষণা দিয়েছেন। কি অপরাধে ডিজির অপসারণ চাইছেন এমন প্রশ্নের জবাবে নতুন ভবনের নিচতলায় কর্মরত একজন এই প্রতিবেদককে বলেন, এই ডিজি আওয়ামী লীগের দোসর। ৫ আগস্টের পর সবাই যখন দেশ ছেড়ে পালিয়েছে তখন এই কর্মকর্তা অনেক অপকর্ম করেছেন এখানে বসে বসে। তাকে পদত্যাগ করতেই হবে।
আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক আব্দুর রেজ্জাক সিদ্দিকী (শিক্ষা অফিসার) এ বিষয়ে নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা সব বৈষম্যের অবসান চাই। যারা যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখছেন তাদেরকেই বদলি করে ঢাকার বাইরে পাঠানো হয়েছে। আমাদের আন্দোলন শান্তিপূর্ণ। আমরা গেটের বাইরেও যাচ্ছি না। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নির্দেশে আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে সুষ্ঠুভাবে আমাদের দাবি আদায় করতে চাই। আমরা বিতর্কিত ও আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে চিহ্নিত কর্মকর্তাদের অপসারণ করে ডিপিইতে আইনের শাসন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে চাই।
অভিযোগ রয়েছে বর্তমান ডিজি আব্দুস সামাদ ডিপিইতে গত জুন মানে যোগদানের পর থেকেই তার কক্ষে পরিচালক পদমর্যাদার নিচের কোনো কর্মকর্তা প্রবেশ করতে অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। এছাড়া প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালকের ৯টি পদের মধ্যে ৭টিতেই বর্তমানে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা প্রেষণে পদায়িত আছেন। তিনি প্রশাসন ক্যাডারের এসব কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষার স্থায়ী ও নিজস্ব পদধারী কর্মকর্তাদের নিপীড়নে লিপ্ত আছেন।
সামগ্রিক বিষয় জানতে গতকাল ডিপিইর মহাপরিচালকের মোবাইল ফোনে কয়েকবার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে দুপুরে মিরপুরের তার দফতরে গিয়েও পাওয়া যায়নি। তবে তার অফিসের এক কর্মকর্তা এ এফ এম জাহেদ ইকবাল নয়া দিগন্তকে জানান, ডিজি সাহেব গত ১০ দিন ধরে অফিসেই আসছেন না। আমরাও তাকে মোবাইলে পাচ্ছি না। অপর দিকে ডিজির ব্যবহৃত ঢাকা মেট্রো ঘ ১৮-৬০৫৬ প্রাডো গাড়িটি শেডে পড়ে রয়েছে। গাড়িচালকও এক সপ্তাহ থেকে অফিসে আসছেন না।