পেয়ারা একটি মৌসুমী ফল। এখন পেয়ারার ভরা মৌসুম। তবে এখন সারা বৎসরই বাজারে পেয়ারা পাওয়া যায়। বাংলাদেশের সর্বত্রই পেয়ারা জন্মে। তবে বরিশাল, পিরোজপুর, রাঙ্গামাটি, কুমিল্লা, গাজিপুরে বানিজ্যিক ভাবে পেয়ারা চাষ হয়। যদিও শহরে একটু দাম বেশী কিন্তু গ্রামে পেয়ারার দাম অনেকই কম। একটি পেয়ারাতে চারটি কমলা লেবুর সমান পুষ্টি রয়েছে। পেয়ারা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ক্যান্সার প্রতিরোধ করে, চোখ ভাল রাখে, পেটের জন্য উপকারী আরো কত কী। পুষ্টমানে কমলার গুনাগুন ১৮১ পয়েন্ট আর পেয়ারার গুনাগুন ৪২১ পয়েন্ট। পেয়ার চামড়ায় কমলা লেবুর চেয়ে ৫ গুন বেশী ভিটামিন সি রয়েছে। পেয়ারায় ভিটামিন এ এবং ভিটামিন বি কমপ্লেক্সও পাওয়া যায়। ১০০ গ্রাম পেয়ারার মধ্যে শক্তি ৬৮ কিঃ ক্যাল, ভিটামিন সি ৩০২ মিঃগ্রাঃ, ক্যালশিয়াম ৩০ মিঃগ্রাঃ, ফসফরাস ২৯ মিঃগ্রাঃ, কার্বোহাইড্রেট ১৭.১০ গ্রাম, প্রোটিন ১.০০ গ্রাম, ভিটামিন এ ২৫০ আই ইউ, থিয়ামিন ০.০৭ গ্রাম, নিয়াসিন ১.২০ মিঃগ্রাঃ আয়রন ০.৩ মিঃগ্রাঃ লিপিড ১.০০ গ্রাঃ, সোডিয়াম ২ গ্রাম, পটাশিয়াম ৪১৭ মিঃগ্রাঃ শর্করা ১৪ গ্রাঃ চিনি ৯ গ্রাঃ ম্যাগনেশিয়াম ২২ মিঃগ্রাঃ জিংক ০.২৩ মিঃগ্রাঃ লাইকোপেন ৫২০৪ মাইক্রোগ্রাম রয়েছে। পেয়ার একটি সুস্বাদু ফল। পৃথিবীতে ১০০ প্রজাতির বেশী পেয়ারার জাত রয়েছে। আমাদের দেশেও বেশ কয়েক জাতের পেয়ারা পাওয়া যায়। আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেকটি ফলের মধ্যে তাঁর কুদরতের যে বৈশিষ্ট রেখে দিয়েছেন তা চিন্তা করলে তাঁর শুকরিয়া আদায় না করে পারা যায় না। আরো জেনে নেওয়া যাক পেয়ারায় কি কি রোগ ভাল করে:
১। অরুচি তাড়াতে: ডাঁসা পেয়ারা চিবালে অরুচি চলে যায়। আবার ডাঁসা পেয়ার ভাতে সিদ্ধ করে পানিতে কচলিয়ে ছেঁকে বীজ ফেলে দিতে হবে। তারপর ৩ চা চামচ পেয়ারার জুস নিয়ে স্বাদমত লবন-চিনি মিশিয়ে খেলে অরুচি দূর হয়ে যাবে।
২। মুখের দুর্গন্ধ: যাদের মুখে দুর্গন্ধ আছে তারা বুঝেন তার কত জ¦ালা। তবে এই মৌসুমে চিন্তা নেই বেশী বেশী পেয়ারা খান মুখের দুর্গন্ধ চলে যাবে। আর পেয়ারা চিবালে দাঁত ও মাড়ীর বেশ উপকার হয়।
৩। মাড়ীর রক্তপাত: অনেকের দাঁতের মাড়ী দিয়ে রক্ত ঝরে। পেয়ারা খেলে মাড়ীর রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যায়।
৪। কোষ্ঠকাঠিন্য: ১-২ দটি পাকা পেয়ারা রাতে খেলে খাওয়ার পর খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য ভাল হয়ে যাবে।
৫। উচ্চ রক্তচাপ: পেয়ারাতে প্রচুর পরিমান পটাশিয়াম ও ভিটামিন সি আছে যা হৃদস্পন্দনকে স্বাভাবিক রাখে এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
৬। চোখের রোগে: পেয়ারায় ভিটামিন এ রয়েছে। পেয়ারা চোখের কর্নিয়া সুস্থ রাখে এবং রাত কানা রোগ প্রতিরোধ করে।
৭। রোগ প্রতিরোধ: একটি পেয়ারায় ৪ টি কমলা লেবুর সমান ভিটামিন সি রয়েছে। ভিটামিন সি আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ফলে শরীর বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে যুদ্ধ করার শক্তি লাভ করে।
৮। ক্যান্সার রোধ: পেয়ারার মধ্যে অনেক ধরনের এন্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে। যা শরীরে ক্যান্সার কোষ তৈরীতে বাঁধা দেয়। পেয়ারা প্রোস্টেট ক্যান্সার ও স্তন ক্যান্সাার প্রতিরোধ করে।
৯। ডায়াবেটিস: নিয়মিত পেয়ারা খেলে ডায়াবেটিস টাইপ-২ এর ঝুঁকি কমায়। পেয়ারার মধ্যে যে আঁশ রয়েছে তা শরীরের চিনি শোষন করে।
১০। ত্বকের রুক্ষ ভাব : পেয়ারা ত্বকের রুক্ষ ভাব দূর করে ত্বককে মসৃণ করে। এমনকি শীতের পা ফাঁটাও ভাল করে দেয়।
১১। ঠান্ডাজনিত রোগ: এ্যজমা, ঠান্ডা কাশিতে পেয়ারার জুস খুব উপকারী। ব্রংকাইটিসে পেয়ারা উপকারী। পেয়ারায় আয়রণ ও ভিটামিন সি থাকায় এটি শ্লেষ্মা কমিয়ে দেয়।
১২। ডায়রিয়া রোধে: যারা নিয়মিত পেয়ারা খান তাদের ডায়রিয়া হওয়ার ঝুঁকি থাকে না।
১৩। ওজন কমানো: সবুজ ফলমূল শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে। পেয়ারায় আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও বি । যা মানুষের শরীরের মেদ ঝরিয়ে ওজন কমাতে সাহায্য করে।
১৪। গর্ভবর্তী মায়েদের জন্য: পেয়ারায় থাকা ফলিক এসিড গর্ভস্থীত শিশুর স্নায়ুতন্ত্রী গঠনে সাহায্য করে। তাই গর্ভবর্তী মায়েদের জন্য পেয়ারা উপকারী।
আসুন এই ভর মৌসুমে প্রতিদিন অন্তত একটি পেয়ারা খাই এবং সুস্থ থাকি।