আদালতের দেওয়া ১৫ মাসের কারাদণ্ড ভোগ করতে পুলিশে আত্মসমর্পণ করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার ৭৯ বছর বয়সী সাবেক প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমা। এর মধ্য দিয়ে দেশটির জনগণ নতুন এক ইতিহাসের সাক্ষী হলো। কারণ এর আগে দেশটি কোনো সাবেক প্রেসিডেন্টের কারাভোগ দেখেনি।
পুলিশ মুখপাত্র লিরান্দজু থেম্বা এক বিবৃতিতে নিশ্চিত করেছেন, জুমা ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তিনি গত সপ্তাহের সাংবিধানিক আদালতের রায় মেনে পুলিশ হেফাজতে ছিলেন। খবর আল-জাজিরা।
আদালত অবমাননার দায়ে গত ২৯ জুন জুমার ১৫ মাসের কারাদণ্ড হয়। দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বোচ্চ আদালতের দেওয়া ওই রায়ে জুমাকে স্বেচ্ছায় পুলিশে ধরা দিতে পাঁচ দিনের সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। গত রোববার রাতে ওই সময়সীমা শেষ হয়। কিন্তু প্রথমে জুমা পুলিশে ধরা দিতে অস্বীকৃতি জানান। তাঁর ভাষ্য, করোনা মহামারির মধ্যে এই বয়সে কারাগারে গেলে তা তাঁকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেবে। পরে পুলিশের পক্ষ থেকে বুধবার মধ্যরাতের মধ্যে জুমাকে আত্মসমর্পণের সময়সীমা দেওয়া হয়েছিল।
ক্ষমতায় থাকাকালেই জুমার বিরুদ্ধে দুর্নীতির বিভিন্ন অভিযোগ ওঠে। এ অভিযোগ তদন্ত করছিলেন দেশটির উপপ্রধান বিচারপতি রেমন্ড জোনডো। গত ফেব্রুয়ারিতে তদন্তের জন্য জুমাকে তলব করা হলেও তিনি হাজির হননি। এ কারণে আদালত অবমাননার দায়ে তাঁকে ১৫ মাস কারাবাসের এই দণ্ড দেওয়া হয়।
পদত্যাগের মধ্য দিয়ে ২০১৮ সালে তাঁর প্রায় ৯ বছরের শাসনামলের অবসান ঘটে। জুমার বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ, তিনি রাষ্ট্রীয় অর্থ লোপাট করেছেন এবং ব্যবসায়ীদের রাজনীতিতে নাক গলানোর সুযোগ করে দিয়েছেন। বিশেষ করে জুমার আশকারাতেই ভারতীয় বংশোদ্ভূত ‘গুপ্ত পরিবার’ নামে একটি সুপরিচিত ব্যবসায়ী পরিবার রাজনীতিতে বেপরোয়া হস্তক্ষেপ করেছে। প্রসঙ্গত, ১৯৯৩ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের সাহারানপুরের তিন ভাই অজয় গুপ্ত, অতুল গুপ্ত ও রাজেশ ওরফে টনি গুপ্ত দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্যবসা শুরু করেন। দেশটির ক্ষমতাসীন রাজনীতিকদের সঙ্গে পরিবারটির ঘনিষ্ঠতা সবার সামনে আসে ২০১৩ সালে।
তবে জ্যাকব জুমা বরাবরই বলে আসছেন, বিদেশি কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা এক দশক ধরেই তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরানোর ষড়যন্ত্র করছিল। গুপ্ত পরিবারের হাতে তিনি দেশ তুলে দিয়েছেন, এমন সব অভিযোগই মিথ্যা। তাঁর একটি ভাষ্য ছিল, ‘আমি কি জোহানেসবার্গকে নিলামে তুলেছি?’
জ্যাকব জুমা সব অভিযোগ অস্বীকার করলেও গুপ্ত পরিবারের সঙ্গে তাঁর পরিবারের সম্পর্ক কখনো অস্বীকার করেননি। তিন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ভাইদের এ পরিবারের সঙ্গে জুমা পরিবারের সম্পর্ক এতটাই গভীর ছিল যে, একসময় দুটি পরিবারকে একসঙ্গে ‘জুপ্তা’ বলা হতো।
গুপ্ত পরিবারের মালিকানাধীন বিভিন্ন কোম্পানি জুমার শাসনামলে সরকারি বড় বড় প্রকল্পের কাজ পেত। এ ক্ষেত্রে তারা বলা যায়, একচ্ছত্র ছিল। এমনকি তাদের প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে জ্যাকব জুমার ছেলে দুদুজানেকেও নিয়োগ দিয়েছিল তারা। জুমার বিরুদ্ধে অভিযোগ, এই পরিবারের সঙ্গে তিনি এমনভাবে জড়িয়ে ছিলেন যে অনেক সময় তারাই বলে দিত রাষ্ট্রের কোন সিদ্ধান্ত কীভাবে নিতে হবে। আর এই নির্দেশনা অমান্য করলে সরকারি কর্মকর্তাদের পদচ্যুতিও ঘটত।