আচ্ছা ধর্মের দরকার কি আমি এটাই বুঝি না। সেই প্রাচীন যুগ তো এখন আর নাই। এখন আমরা সভ্য, বুদ্ধিমান প্রানী। মানবতাবাদীতাই কি শ্রেষ্ঠ ধর্ম না?
মানবতাবাদীতা কেন শ্রেষ্ঠ ধর্ম না তার অনেকগুলো কারণ আছে, নিচের তার কয়েকটি উল্লেখ করছি।
এক – মানবতাবাদীতার সমস্যা হলো যে মানবতাবাদীতার কোন স্ট্যান্ডার্ড নাই। যেমন, আমরা সবাই জানি যে আমাদের উচিত বাবা-মার সাথে ভালো ব্যবহার করা। কিন্তু, কতটুকু ভালো ব্যবহারকে ভালো ব্যবহার বলবো? কে এটার স্ট্যান্ডার্ড ঠিক করে দিবে? অথচ, ইসলাম বলে, বাবা-মার সাথে এমনভাবে ভালো ব্যবহার করো যে তাদের প্রতি কখনো উহ্ শব্দ পর্যন্ত করবে না। এমনিভাবে, মানুষের জীবনের প্রতিটা কাজের স্ট্যান্ডার্ড ধর্ম (বিশেষ করে ইসলাম) নির্ধারিত করে দেয়, ফলে পথহারা মানুষ পথ খুঁজে পায়।
দুই – মানুষ এমন একটা প্রাণী যার ব্রেইন ওয়াশ করা খুব সহজ, আর একবার ব্রেন ওয়াশ হয়ে গেলে সে মানুষ হত্যার মত ঘোরতর খারাপ কাজকেও সে খুব স্বাভাবিক ব্যাপার বলে মেনে নিতে পারে (যেটা আসলে অমানবিক!)। যেমন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলার জার্মানদের এমনভাবে ব্রেইন ওয়াশ করেছিল যে তারা অনায়াসে গণহত্যা সমর্থন করেছিলো। আবার, প্রিয়নবী মুহাম্মদ(সা) এর আগমনের আগে আরবের রীতি ছিল মেয়েদের জ্যান্ত কবর দেয়া, এটাকে তারা খুব স্বাভাবিক মনে করত! কারণ, তাদের ব্রেইন এভাবেই ওয়াশ হয়ে গিয়েছিল। এক সময় আমেরিকায় সমকামীদের ঘৃণার চোখ্যে দেখা হতো, অথচ এখন দেখা হয় সম্মানের চোখে! আজকের সমাজে ভাই-বোন বিছানায় শোয়াকে (Incest) ঘৃণার চোখে দেখা হয়, কিন্তু সেইদিন খুব বেশী দূরে নাই যেইদিন এই নোংরা কাজটাকেও মানবতার চোখে ‘হালাল’ হবে!
সত্যি কথা হলো, স্ট্যান্ডার্ড ঠিক না করে দিলে মানুষ আর মানুষ থাকে না, ক্রমশ:ই পশু হয়ে যায় । আর ভালো-মন্দের এই স্ট্যান্ডার্ড মানুষ দিতে পারবে না, কারণ সে সব সময়ই সুবিধাবাদী, সব সময়ই কিছু না কিছু দ্বারা ব্রেইন ওয়াশড। এই স্ট্যান্ডার্ড আসতে হবে উপরের লেভেল থেকে। এই প্রসঙ্গে এমন একজনের উক্তি দিচ্ছি যাকে কোন ‘মানবতাবাদী’ উপেক্ষা করতে পারবে না!
We cannot solve our problems with the same thinking we used when we created them. – Albert Einstein
একটু চিন্তা করলে বুঝবেন উপরের কথাটায় একটা অসীম পুনরাবৃত্তির চক্র রয়েছে। আপনাকে যে কোন সমস্যার সমাধান করতে হলে যে লেভেলে তা তৈরী করা হয়েছিলো তার উপরের লেভেলে যেয়ে চিন্তা করতে হবে, কিন্তু ঐ লেভেলে চিন্তা করতে যেয়ে আপনি আবার কিছু সমস্যা তৈরী করবেন, যার সমাধান করতে হলে যেতে হবে আরো উপরে, তারপর আরো, তারপর আরো … শেষমেশ আপনি আসলে সমস্যার সমাধানই করতে পারবেন না। সুতরাং, মানবজীবনের সমস্যার সমাধান আসতে পারে শুধুমাত্র সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর কাছ থেকে।
তোমরা কি বেশী জানো, না আল্লাহ্? তার চেয়ে বড় জুলুমকারী কে যে আল্লাহর কাছ থেকে পাওয়া প্রমাণ গোপন করে? – (সূরা বাকারাহ্ ২:১৪০)
তিন – মানুষকে সোজা রাখার সবচেয়ে উত্তম উপায় হলো Carrot and Stick পদ্ধতি। ধর্মকে বাদ দিলে স্রষ্টার কাছে জবাবদিহিতা বাদ দেয়া হয়, বাকী থাকে শুধু মানুষের কাছে জবাবদিহিতা। কাজেই, যার স্রষ্টাভীতি (ইসলামী পরিভাষায় তাকওয়া) নাই সে যখন মানুষের চোখকে ফাঁকি দিয়ে তার লোভ-লালসা পূরণের কোন উপায় পেয়ে যায়, তখন সেই কাজটা খারাপ হলেও খুব সহজেই সেই পাপগুলো সে করে ফেলে বা ভালো কাজ করা থেকে বিরত থাকে।
উদাহরণ দিচ্ছি। ধরুন আপনার এক প্রতিবেশী আপনার কাছে একদিন সাহায্য চাইলো, আপনি তাকে সাহায্য করলেন, কিন্তু বিনিময়ে সে আপনাকে ধন্যবাদ জানালো না, আপনি কিন্তু মন:ক্ষুণ্ন হবেন। দ্বিতীয় একদিন সে সাহায্য চাইলো, আপনি সেদিনো তাকে সাহায্য করলেন, এবারো সে আপনাকে ধন্যবাদ জানালো না, আপনি কিন্তু আসলেই মন:ক্ষুন্ন হবেন এবার, এবং খুব সম্ভবত: তৃতীয়দিন সে যখন সাহায্য চাইবে আপনি তাকে সাহায্য করবেন না। কারণ, মানুষ জন্মগতভাবে প্রতিদান প্রিয় (এর জন্যই বছর শেষে বেতন না বাড়লে আপনার মন খারাপ হয়ে যায়!), সে একদিন ফ্রি ফ্রি কাজ করে দিবে, ২ দিন করে দিবে, কিন্তু তৃতীয় দিন আর করবে না। অথচ, আপনি যদি একজন প্রকৃত ধার্মিক হয়ে থাকেন, আপনি কিন্তু তা-ও ঐ মানুষটির উপকার করে যাবেন, ধন্যবাদে তোয়াক্কা করবেন না। কারণ, যে আল্লাহয় বিশ্বাস করে, সে পরকালে বিশ্বাস করে। একজন প্রকৃত ধার্মিক মানুষ এই দুনিয়ায় মানুষের কাছ থেকে প্রতিদান পাবার আশায় কাজ করে না, সে কাজ করে করে আল্লাহর কাছে প্রতিদান পাবার আশায়। একজন মু’মিন গীবত করবে না, অশ্লীল কথা বলবে না – যদিও সে জানে এই কাজের জন্য তাকে পুলিশ ধরবে না, যদিও জানে কেউ তাকে দেখছে না, কিন্তু সে জানে আল্লাহর কাছে তাকে একদিন জবাবদিহি করতেই হবে, আর তাই সে সর্বাবস্থায় সকল খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে চেষ্টা করবে। কাজেই ধর্মীয় জীবন ব্যবস্থা অবশ্যই ধর্মহীন জীবন ব্যবস্থা থেকে শ্রেষ্ঠ।
গবেষনায় দেখা গেছে যে ধার্মিক মানুষেরা ধর্মহীনদের চেয়ে দান বেশী করে এবং ভলান্টিয়ার কাজেও বেশী অংশগ্রহণ করে। বিশ্বখ্যাত সমাজবিজ্ঞানী আর্থুর সি ব্রুকস স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত তার গবেষনাপত্র Religious Faith and Charitable Giving এ তথ্য-উপাত্তসহ এই ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। কোন্ কোন্ ফ্যাক্টর মানুষের civic behavior (যেমন – দানশীলতা এবং ভলান্টিয়ার কাজ) কে প্রভাবিত করে তা জানার জন্য ২০০০ সালে আমেরিকার কিছু রিসার্চার ৫০টি কমিউনিটির থেকে ৩০ হাজার অবজারভেশন সংগ্রহ করে। তাদের গবেষনায় প্রাপ্ত ফল দেখে তারা বিস্মিত হয়ে যায় – নাস্তিকেরা মুখে যত বড় বড় কথাই বলুক না কেন, ভালো কাজের হিসাব নিলে দেখা যায় যে ধার্মিকেরা ভালো কাজে অংশগ্রহণে সেক্যুলারদের থেকে বহুগুণে এগিয়ে আছে। আমি আর্থুর সি ক্লার্কের লেখা থেকে উদ্ধৃত করছি:
- The differences in charity between secular and religious people are dramatic. Religious people are 25 percentage points more likely than secularists to donate money (91 percent to 66 percent) and 23 points more likely to volunteer time (67 percent to 44 percent).
- The data show that if two people — one religious and the other secular — are identical in every other way, the secular person is 23 percentage points less likely to give than the religious person and 26 points less likely to volunteer.
চার- মানবতাবাদীরা প্রায়শ:ই হয়ে দাঁড়ায় সুবিধাবাদী। একজন মানবতাবাদী যে শাস্তি সবার জন্য অমানবিক মনে করে, সেই একই শাস্তি তার চরম শত্রুর জন্য সঠিক বলে মনে করতে পারে। উদাহরণ দিচ্ছি। বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সময় মানবতাবাদীরা কিন্তু এইসব অপরাধীদের ফাঁসীর জন্য গলা ফাটিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু, এরাই আবার অন্য আলোচনায় বলবেন মানুষের ফাঁসী দেয়া ঘোরতর অপরাধ, যেহেতু আমরা প্রাণ দিতে পারি না, কাজেই প্রাণ নেয়ার অধিকারো আমাদের নেই। [আপনি আবার ভেবে বসবেন না আমি ৭১ এর খুনীদের মৃত্যুদন্ড বিরোধী! আমি শুধু ৭১ কেন, সকল প্রকার খুনীরই মৃত্যুদন্ডের পক্ষে, কারণ আল্লাহর আইন সকল অপরাধীর জন্য সমান]।
পাঁচ – শেষ কথা হলো ধর্মকে বাদ দিলে আপনি সৃষ্টিকর্তাকে বাদ দিচ্ছেন। অথচ সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব যুক্তি প্রমাণিত দিয়ে (আমার এই লেখাটি পড়ুন), সৃষ্টিকর্তার উপাসনা করা মানুষের মানসিক কাঠামোর অবিচ্ছেদ্য অংশ। আল্লাহ্ মানুষকে উপাসনা করার need দিয়ে তৈরী করেছেন, আর তাই বিপদে পড়লে বা আটকে গেলে ঘোর নাস্তিকও স্রষ্টাকে ডাকে (এই ভিডিওতে উদাহরণ দেখুন)। কাজেই, স্রষ্টাকে উপাসনা না করে মানুষ কখনোই মানসিক প্রশান্তি পাবে না।
ধর্ম ছাড়া পৃথিবীটা কত সুন্দর হতো! এই ধর্মের কারণে মানুষে মানুষে কত বিভেদ, হানাহানি, যুদ্ধ! ধর্মের ব্যাপারটা বাদ দিলে হয় না?
আপনি উপরের বক্তব্যে বিশ্বাসী হলে বুঝে নিতে হবে হয় আপনি জ্ঞান রাখেন না, নতুবা আপনার ব্রেইন শয়তান ভালো মতই ওয়াশ করে রেখেছে। পৃথিবীতে হানাহানি আর যুদ্ধ বরং তখনই হয় যখন মানুষ ধর্ম মানে না। পৃথিবীর বেশীরভাগ যুদ্ধেরই কারণ হলো অর্থ আর ক্ষমতা – ধর্ম না।
বিংশ শতাব্দী ছিল ধর্ম-নিরপেক্ষতা এবং ধর্মহীনতার উত্থান এর শতক। আসুন দেখি এই শতকের মানবতার কিছু অর্জন! (তথ্যসূত্র: How Do You Kill 11 Million People – Andy Andrews)
- প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তুর্কীর নবগঠিত সেক্যুলার সরকার তাদের দেশের জ্ঞানী-গুনী, ধর্মীয় নেতা, নারী, গর্ভবতী মা, আর শিশুসহ ২ মিলিয়ন মানুষ
- ১৯৩৩ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত হিটলার পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে ১১ মিলিয়ন মানুষ।
- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আরো মারা যায় ৫ মিলিয়ন জার্মান বেসামরিক ও সামরিক মানুষ, ২.৮ মিলিয়ন ইউরোপীয়ান
- কম্বোডিয়ার সরকার ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত মেরেছে তার দেশের তিন মিলিয়ন মানুষ – যে দেশের মোট জনসংখ্যা ছিলো ৮ মিলিয়ন
- ১৯১৭ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত সোভিয়েত ইউনিয়নের ‘মানবতাবাদী’ কমিউনিষ্ট সরকার হত্যা করেছে তাদের দেশের ৫৫ মিলিয়ন (জ্বী ঠিক পড়ছেন, সাড়ে পাঁচ কোটি) পুরুষ, নারী এবং শিশুদের!! (গত শতাব্দীর বৃহত্তম গণহত্যা!)
- ৩রা নভেম্বর ২০০২ থেকে শুরু করে পরের ১০ বছরে মার্কিন দ্রোন হামলায় মারা গেছে ৪৭০০ মানুষ যাদের মধ্যে আছে স্কুলগামী শিশু, বিয়েতে যোগ দিতে যাওয়া বরযাত্রীসহ অসংখ্য নিরপরাধ মানুষ (সূত্র: Josh Begle’s DroneStream)
আপনার কাছে আমার প্রশ্ন: এই হত্যাকান্ডের কোন্টি ধার্মিকেরা করেছে? আর স্পেসিফিকভাবে বললে, কোন্টা মুসলমানেরা করেছে? বরং, যে জাতি যত ধর্মবিরোধী ছিল, সেই জাতি ছিল ততো নিষ্ঠুর।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণ ছিল ইউরোপীয় শক্তিগুলোর মতপার্থক্য, শত্রুতা, জোটবদ্ধতা, সামরিকবাদ, সাম্রাজ্যবাদ ও জাতীয়বাদ। ধর্ম এখানে সম্পূর্ন অনুপস্থিত!
The main causes of World War I, which began in central Europe in late July 1914, included many factors, such as the conflicts and hostilitybetween the great European powers of the four decades leading up to the war. Militarism, alliances, imperialism, and nationalism played major roles in the conflict as well. – Wikipedia
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ ছিলো হিটলারের ক্ষমতার লোভ , অর্থের লোভ। আর মানুষকে motivate করার জন্য হিটলার ব্যবহার করেছিলেন মিথ্যা কথা আর ঘৃণাকে। কাজেই, এই যুদ্ধের জন্যও ধর্মকে দোষ দেয়ার কোন কারণ নেই!
The main cause of World War II was the desire and ability of Adolf Hitler, in control of Nazi Germany, to dominate Europe and gain controlespecially of the agrarian resources to the east of Germany.– Wikipedia
৭১ সালে পাকিস্তান আর্মির গণহত্যা, মধ্যপ্রাচ্যে পশ্চিমা আগ্রাসন, এমনকি সিরিয়ায় বাশার আল আসাদের হত্যাযজ্ঞ – এই প্রত্যেকটি নৃশংসতার পিছনের কারণ হলো অর্থ আর ক্ষমতার লোভ । সুতরাং, সত্য হলো পৃথিবীর হত্যা, হানা-হানির মূলে আছে স্রষ্টার কাছে জবাবদিহি করতে হবে এই সত্য উপেক্ষা করে মানুষের কাছের জবাবদিহিতা কৌশলে এড়িয়ে যেয়ে অন্ধভাবে ক্ষমতা আর অর্থের পিছনে ছুটা!
আমেরিকার বিখ্যাত আইন বিশেষজ্ঞ Stephen Carter বলেন যে বিংশ শতাব্দী হলো মানব সভ্যতার ইতিহাসের সবচেয়ে রক্তাক্ত শতক। আর এই বিশাল হত্যাযজ্ঞের পিছনে কারণ ধর্ম না, ছিলো ক্ষমতালোভী চিন্তা-ভাবনা! বিশ্বনন্দিত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী Zbigniew Brzezinski তার Out of Control: Global Turmoil on the Eve of the Twenty-First Century (1993) লেখায় এই হত্যাকান্ডের যে কারণ উল্লেখ করেছেন তা উদ্ধৃত করে Shaikh Hamza Tzortzis বলেন:
Lives had been deliberately extinguished, by politically motivated carnage via state backed entities. The war dead alone for politically motivated reasons is eighty seven and a half million people. State terrorism is the real terrorism.
সুতরাং, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সন্ত্রাস হলো ক্ষমতালিপ্সু রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস! গত শতাব্দীতে ৮ কোটি ৭৫ লক্ষ মানুষ মারা গেছে সেক্যুলার চিন্তা-ভাবনার রাস্ট্রগুলোর সন্ত্রাসের কারনে আর এই রাষ্ট্রগুলোই কিনা দোষ দেয় ধর্মকে! ধর্ম মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করে না, ধর্ম মানুষকে একত্রিত করে, কমন লক্ষ্য দেয়ার মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ করে, অন্য মতের প্রতি সহিষ্ণু হতে শেখায়। অন্যদিকে মানুষকে বিভক্ত করে মুনাফালোভী ধর্মবিদ্বেষী চিন্তা-ভাবনা। প্রকৃত ধর্মীয় শিক্ষা থেকে মানুষ যত বেশী দূরে সরে যাবে, ততই সে দূরে সরে যাবে মনুষ্যত্ব থেকে।
… যে ব্যক্তি নরহত্যা বা পৃথিবীতে ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারী কাজের শাস্তি প্রদানের উদ্দেশ্য ছাড়া কাউকে হত্যা করল, সে যেন পৃথিবীর সকল মানুষকেই হত্যা করল। আর যে কেউ কারো প্রাণ রক্ষা করল, সে যেন পৃথিবীর সকল মানুষের প্রানরক্ষা করল। – সূরা মায়িদাহ্ ৫:৩২
ইসলামের ইতিহাস যদি ঘাটেন তো দেখবেন মুসলিমরা কখনোই জোর করে তাদের ধর্ম অন্য মানুষের উপর চাপিয়ে দেয়নি। ইসলামী রাষ্ট্রে অন্য ধর্মাবলম্বীদের নির্বিঘ্নে ধর্ম-চর্চার অধিকারের ইতিহাস নিয়ে মুসলিমরাই শুধু নয়, অমুসলিমেরাও শত শত গবেষণামূলক লেখা লিখেছেন (পড়ুন Alexander Knysh এর লেখা Islam in Historical Perspective)। ইসলামের সহমর্মিতার আমি শুধু কয়েকটি উদাহরণ দিচ্ছি:
- মদীনায় রাসূলুল্লাহ(সা) নিশ্চিত করেছিলেন যাতে ইহুদীরা নির্বিঘ্নে তাদের ধর্ম পালন করতে পারে।
- উমার(রা) জেরুজালেম এর চাবি হিরাক্লিয়াস এর কাছ থেকে বুঝে নেয়ার পর পাদ্রীর অনুরোধের পরেও গীর্জায় যোহরের নামাজ পড়েননি শুধুমাত্র এই কারণে যে ভবিষ্যতের মুসলিমরা এই গীর্জাকে হয়তো আমিরুল মু’মিনীন এর মসজিদ বলে দাবী করবে।
- খালিদ বিন ওয়ালিদ(রা) এর নেতৃত্বে ৬৩৪ খ্রীষ্টাব্দে সিরিয়ার দামাস্কাস বিজয় করার পর মুসলিমরা সেন্ট জন দি ব্যাপ্টিস্ট গির্জাতে শুক্রবারে জুমুআর নামাজ পড়ত, একই সপ্তাহের রবিবারে খ্রীষ্টানেরা সেই একই গির্জায় তাদের সাপ্তাহিক উপাসনা করত। মুসলিমরা দামাস্কাসে এসে খ্রিস্টানদের গির্জা ভেঙ্গে দেই নাই। বরং মুসলিমদের ব্যবহার আর চারিত্রিক গুনাবলিতে আকৃষ্ট হয়ে দলে দলে মানুষ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে।
- ক্রুসেডারেরা ১০৯৯ সালের ১৫ জুলাই জেরুজালেম দখল করে মুসলমানদের রক্তে পুরো শহরকে হাঁটু পর্যন্ত রক্তে ডুবিয়ে দেয়, কিন্তু এর প্রায় ১শ বছর পর ১১৮৭ সালে সালাহ-আদ-দীন আইউবী (রহিমাহুল্লাহ) যখন জেরুজালেম পুনরূদ্ধার করেন তখন তিনি কোনও প্রতিশোধ তো নেনই নি বরং খ্রীষ্টানসহ সকল বিধর্মীদের ক্ষমা করে দেন, তাদেরকে তাদের মতো করে ধর্ম পালন করতে দেন, এমনকি তাদের কে তাদের সকল সম্পদ নিয়ে অন্য দেশে (ইউরোপে) চলে যাওয়ারও স্বাধীনতা দেন।
[বিস্তারিত জানতে দেখুন: PBS Documentary – Islam: Empire of Faith.]
সকল ধর্মের মানুষের প্রতি ইসলাম সহনশীলতার কথা বলে, সহমর্মিতার আর ন্যায়বিচারের কথা বলে। কারণ এটা মানুষের তৈরী ধর্ম না, এটা এসেছে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার কাছ থেকে, যিনি সবচেয়ে বেশী ন্যায়বিচারক। একজন মু’মীনের কাছে একজন মুসলমান যতটুকু নিরাপদ, একজন অমুসলিমও ততটুকুই নিরাপদ – যেরকম রাসূলুল্লাহ(সা) শিখিয়ে দিয়ে গেছেন।
রাসূলুল্লাহ(সা) বলেন: সাবধান! যে ব্যক্তি কোনও মুয়াহিদের (মুয়াহিদ: মুসলিম রাষ্ট্রে ন্যায়সঙ্গতভাবে বসবাসরত অমুসলিম) উপর অত্যাচার করবে অথবা তার কোন অধিকার ছিনিয়ে নিবে অথবা তাকে অসহনীয় যন্ত্রণা দিবে অথবা তার অনুমতি ছাড়া তার কোনও কিছু নিবে, সে জেনে রাখুক যে বিচার দিবসে আমি তার (অত্যাচারী ব্যক্তির) বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবো। – (সুনান আবু দাউদ)