দুগিনের মতবাদ এবং অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ
Advertisements

আলেকজান্দার দুগিনকে পশ্চিমা গণমাধ্যম উগ্র রুশ জাতীয়তাবাদের গুরু বলে থাকেন। এরকম ক্ষেত্রে পশ্চিমের মিডিয়া মুসলিমদের জন্য বরাদ্দ করেন মৌলবাদী শব্দটি। মার্কিন মিডিয়া একজন তাত্ত্বিক দুগিনকে গডফাদার হিসেবে চিত্রিত করেই ক্ষান্ত হননি, রাশিয়া মনে করে আগস্টে দুগিনকে হত্যার চেষ্টাও পশ্চিমারা করেছে।

দুগিন আসলে পুতিনের কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ! আজ বাংলাদেশের রুশ দূতাবাস তাদের ভেরিফায়েড পেইজে আলেকজান্দার দুগিনের টেলিগ্রাম আইডির একটা লেখা শেয়ার করেছে। এই একটা লেখাতেই দুগিনের মনোভাব, পুতিনের প্রতি দুগিনের নির্দেশনা এবং নতুন বিশ্বব্যবস্থার নয়া প্যারাডাইম নির্দেশ করে। ১৯০ শব্দের ছোট্ট ওই লেখায় কী আছে, সেটার তরজমা না করে ব্যাখ্যা করব। লেখা শেষ করে তিনি ছোট্ট একটা শিরোনাম দিয়েছেন। স্পিরিচুয়াল ফ্যাক্টর বা আধ্যাত্মিক ফ্যাক্টর।

দুনিয়াব্যাপী যে সংঘর্ষ তথা যুদ্ধ শুরু হয়েছে তার মূলে রয়েছে আধ্যাত্মিক এবং ধর্মীয় দিক। রাশিয়া বর্তমানে একটি ধর্মবিদ্বেষী সভ্যতার সাথে যুদ্ধ করছে যারা আল্লাহর সাথে লড়াই অব্যাহত রেখেছে। আর তা হলো মানুষের আধ্যাত্মিক, নৈতিক মূল্যবোধের ভিত্তিগুলিকে উৎখাত করে দেয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এরা ঈশ্বর, গির্জা, পরিবার, লিঙ্গ এবং মানুষের স্বকীয়তাকে অস্বীকার করছে। এখানে দুগিন খ্রিস্টান ধর্মের অর্থোডক্সদের মেইনস্ট্রিম খ্রিস্টান হিসেবে স্বীকৃতি দিতে চাচ্ছেন, অপরদিকে ঐতিহ্যবাহী ইসলামের কথা তিনি বলেছেন। তবে ঐতিহ্যবাহী ইসলাম বলতে তিনি কী বুঝিয়েছেন সেটা বলেননি। হতে পারে পশ্চিমের লিবারেল ইসলামের কাউন্টার প্রাকটিসিং মূলধারার ইসলামকে তিনি নির্দেশ করেছেন।

তিনি বলছেন, নির্দিষ্ট করে অর্থোডক্স খ্রিস্টান, ট্রেডিশনাল ইসলাম, ইহুদি, হিন্দু, বৌদ্ধ ধর্মের মধ্যে সমস্ত পার্থক্যসহ সকল ধর্ম এবং ধর্মের পাটাতনে নির্মিত সংস্কৃতি যা খোদাকে স্বীকার করে। মানুষের উঁচু আধ্যাত্মিকতা, নৈতিক মর্যাদা, ঐতিহ্য এবং রীতিনীতিকে সম্মান করে। রাষ্ট্রে পরিবার ও সম্প্রদায়ের বন্ধনকে আধুনিক পশ্চিম বিলুপ্ত করেছে। এর পরিবর্তে পশ্চিমারা ভার্চুয়াল বাস্তবতা, চরম ব্যক্তিত্ববাদ, লিঙ্গের ধ্বংস, সার্বজনীন নজরদারি মোটাদাগে একটি সর্বগ্রাসী বিলুপ্তির সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করেছে। প্রাকৃতিকভাবে যা কিছু প্রতিষ্ঠিত এবং শৃঙ্খলাপূর্ণ সেটাকে তারা নির্মূল করে দিয়ে শুধুমাত্র বৈষয়িক প্রাধান্য দিয়ে নয়া বিশ্বব্যবস্থা সৃষ্টি করেছে।

দুগিন এই সমাজ ব্যবস্থার একটা নামকরণ করেছেন। তার ভাষায় এটি একটি পোস্ট-ট্রুথ সমাজ। যার বাংলা অভিব্যক্তি হতে পারে মিথ্যার বেসাতির সমাজ। যেখানে সত্যকে বাতিল করে দেয়া হয়েছে। সত্য এবং শৃঙ্খলাকে ভেঙে ফেলার সমাজ। দুগিনের এই বক্তব্যের সত্যতা ইতিমধ্যে বাংলাদেশের শাহবাগকেন্দ্রিক সমাজ ব্যবস্থায় লক্ষ্যণীয়।

তিনি বলছেন, ইউক্রেনে প্রকাশ্য শয়তানবাদ এবং সরাসরি বর্ণবাদ ব্যাপকভাবে বিকাশ লাভ করেছে এবং পশ্চিম কেবল তাদের সমর্থনই করে যাচ্ছে।

তিনি আরো বলছেন, আমরা অর্থোডক্স প্রবীণেরা একে ‘খ্রিস্টবিরোধী সভ্যতা’ বলি তাই এই বিষয় নিয়ে কাজ করছি। রাশিয়ার বর্তমান ভূমিকা হলো এই সিদ্ধান্তমূলক যুদ্ধে বিভিন্ন ধর্মের যারা বিশ্বাসী তাদেরকে একত্রিত করা। তার মতে এই যুদ্ধ অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে বিশ্বাসীদের যুদ্ধ। তিনি মূলত ক্যাথলিক খ্রিস্টান এবং তাদের সহযোগীদেরকেই সম্ভবত অবিশ্বাসী হিসেবে পরিচিত করতে চাচ্ছেন।

সবশেষে তিনি আহবান জানাচ্ছেন। তিনি সতর্ক করে বলছেন, দুনিয়ার এই শত্রুরা আপনার বসতি ধ্বংস, স্বামী, পুত্র বা কন্যাকে হত্যা করার জন্য আসছে। ওই সময় তাদের দেয়া উচিত নয়। তাই আপনার অপেক্ষা করাও উচিত নয়। এক সময় অনেক দেরি হয়ে যাবে এবং খোদাদ্রোহী সময়কে দেখতে হতে পারে।

তার শেষ প্যারায় ইউক্রেনে রাশিয়ার আগাম হামলার কারন কিছুটা হলেও উপলদ্ধি করা যায়। দুগিন মনে করেন, খোদাদ্রোহীদের বিরুদ্ধে আগেই হামলা করতে হবে এবং সেটা সকল ধর্ম বিশ্বাসীদের একত্রিত হয়ে। তিনি এই পোস্ট-ট্রুথ সমাজ ভেঙে ফেলতে বদ্ধপরিকর।

ইসলামের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অনন্ত যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন বুশ, যার কিতাবি নাম ‘ওয়ার অন টেরর’। তাদের বিরুদ্ধেই আরেকটি ইউরোপিয়ান শক্তি অনন্ত যুদ্ধের ইঙ্গিত দিচ্ছেন। সেটা হলো অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। তিনি মুসলিমদের এই যুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানাচ্ছেন।

Advertisements