সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে ‘রাসেল-প্রিয়া’ দম্পতির একটি কন্যা হয়। রাসেল বিল পরিশোধ করতে অক্ষম থাকায় হাসপাতালের পরিচালক দম্পতিকে সন্তান বিক্রি করে বিল পরিশোধের পরামর্শ জানালে তারা রাজি হয়, ছেলে হলে ৫০ হাজার কন্যা হলে ৩০ হাজার এই চুক্তিতে। তবে দম্পতিরা বলছেন, দত্তক দিতে রাজি হয়েছিলেন, কিন্তু পরে কাকে দত্তক দিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদেরকে সে বিষয়ে কিছুই জানায়নি। পরে এ ঘটনায় মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নবজাতককে বিক্রি করে দিয়েছে এমন অভিযোগ উঠে। এ ঘটনায় হাসপাতালের পক্ষে বিপক্ষে অভিযোগ থাকলেও কোনো পক্ষই লিখিত অভিযোগ না দেয়ায় ব্যবস্থা নিতে পারেনি প্রশাসন।
গত সোমবার (২৪ মে) সন্ধ্যায় এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। তবে গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর এলাকার (শ্রীপুর চৌরাস্তা সংলগ্ন) ‘নিউ এশিয়া ডায়াগনস্টিক ও প্যাথলজি হাসপাতালে’ (২২ মে) এ ঘটনা ঘটে।
অভিযোগ রয়েছে হাসপাতালের পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম ওই নবজাতককে টাকার বিনিময়ে অচেনা ব্যক্তির নিকট বিক্রি করে দেন। পরে হাসপাতালের বিল রেখে প্রসুতিকে ১৪ হাজার টাকা হাতে দিয়ে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেন।
এদিকে এলাকায় প্রচার হয় জাহাঙ্গীর প্রসূতির নবজাতক সন্তান বিক্রি করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। প্রসুতিকে জানিয়েছে, ৩০ হাজার টাকায় কন্যা সন্তান বিক্রি হয়েছে এবং হাসপাতালের বিল ১৬ হাজার টাকা রেখে ১৪ হাজার টাকা নবজাতকের মা প্রিয়ার হাতে তুলে দিয়েছেন।
নবজাতকের মা প্রিয়া আক্তার (২৪) ময়মনসিংহ জেলার তারাকান্দা উপজেলার মালিডাঙ্গা গ্রামের মো: রাসেলের স্ত্রী। তিনি উপজেলার শ্রীপুর-কাপাসিয়া সড়কের পাশে বাবুল সরকারের বাড়ির ভাড়াটিয়া।
প্রিয়া আক্তার বলেন, তার স্বামী দিনমজুর। স্বল্প আয়ের সংসারে এক মেয়ে ফাতেমা (২) রয়েছে। প্রসব ব্যাথা নিয়ে গত রোববার (২১ মে) শ্রীপুর চৌরাস্তার নিউ এশিয়া হাসপাতালে যান। নিজেকে ডাক্তার পরিচয়ে হাসপাতালের পরিচালক জাহাঙ্গীর জানান, দ্রুত সিজার না করলে মা-সন্তান দুই জনেরই সমস্যা হবে। অপারেশন করতে ১৫ হাজার টাকা লাগবে। আমার স্বামী অনেক চেষ্টা করেও টাকা জোগাড় করতে পারেনি। এক পর্যায়ে জাহাঙ্গীর সন্তান বিক্রির প্রস্তাব দেন। নবজাতককে তার কথামতো তুলে দিলে নগদ টাকা দেবেন। ছেলে হলে ৫০ হাজার টাকা ও মেয়ে হলে ৩০ হাজার টাকার আশ্বাস দেন। হাসপাতালের বিল পরিশোধের আশ্বাসও দেন তিনি।
অসহায় দম্পতি জাহাঙ্গীরের প্রস্তাবে রাজি হলে রাতেই প্রিয়ার সিজারের মাধ্যমে কন্যা সন্তান জন্ম দেন। পরের দিন সোমবার (২২ মে) জাহাঙ্গীর অচেনা কোন এক ব্যক্তির হাতে প্রিয়ার নবজাতক সন্তানকে বিক্রি করে দেন। জাহাঙ্গীর কার কাছে নবজাতককে বিক্রি করেছে শত চেষ্টা করেও জানতে পারেনি অসহায় দরিদ্র রাসেল দম্পতি। পরে জাহাঙ্গীর- প্রিয়া দম্পতিতে ১৪ হাজার টাকা দিয়ে বলেন, নবজাতক কন্যা সন্তানকে বিক্রি করে ত্রিশ হাজার টাকা পেয়েছি। তা থেকে ১৬ হাজার টাকা হাসপাতালের বিল কেটে রেখেছেন।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হলে তথ্য সংগ্রহ করতে গণমাধ্যমকর্মীরা হাসপাতলে যায়। পরে মালিক পক্ষ বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার সবরকম চেষ্টা চালিয়ে যান।
হাসপাতালের মালিক মো. ফজলুল হক বিষয়টি তার জানা নেই দাবী করে বলেন, হাসপাতালে প্রিয়া আক্তারের সিজার হয়েছে। বাহিরে কে তার সন্তান বিক্রি করে দিলো তা জানা নেই। এ ঘটনার সাথে হাসপাতালের কেউ জড়িত নয়।
অভিযুক্ত হাসপাতালের পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর সন্তান বিক্রির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি কোনও নবজাতককে বিক্রি করেননি। রাসেল-প্রিয়া দম্পতি নিজেরাই তাদের সন্তান দত্তক দিয়ে হাসপাতালের বিল পরিশোধ করেছে।
শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা প্রণয় ভূষণ দাস বলেন, এ বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে হাসপাতালটির অনুমোদন রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘খোঁজ নিয়ে পরে জানানো হবে,’।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এএফএম নাসিম জানান, ‘বিষয়টি স্থানীয় সাংবাদিকদের মাধ্যমে জেনেছি। এখনো কেউ লিখিত অভিযোগ দায়ের করেননি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে’।