ট্রেন চালকদের কর্মবিরতি
Advertisements

বাংলাদেশ রেলওয়ের রানিং স্টাফ ও শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের ডাকা হঠাৎ কর্মবিরতিতে সারা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। রানিং স্টাফদের এই আন্দোলনের নেতৃত্বে রয়েছেন সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক এবিএম শফিকুল আলম, যিনি ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানির শ্বশুর। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমানও আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ বলে জানা গেছে।

রানিং স্টাফ বলতে বোঝানো হয় ট্রেন পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত পরিচালক (গার্ড), ট্রেনচালক (লোকোমাস্টার), সহকারী চালক এবং টিকিট পরিদর্শক (টিটিই)-দের। বাংলাদেশে এই ধরনের কর্মীর সংখ্যা প্রায় দুই হাজার। ব্রিটিশ আমল থেকে চলে আসা বিশেষ সুযোগ-সুবিধা পুনর্বহালের দাবিতে সোমবার মধ্যরাত থেকে তারা ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেন।

এর আগে ২০২২ সালের ১৩ এপ্রিল শেখ হাসিনা সরকারের সময়ও রানিং স্টাফরা কর্মবিরতি পালন করেছিল। সেই সময়ও দেশব্যাপী ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে রেল কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে তারা আন্দোলন স্থগিত করেন। কিন্তু ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর আবার সক্রিয় হয়ে তারা কয়েক দফা দাবি উত্থাপন করেন। যদিও রেল কর্তৃপক্ষ এবং অর্থ মন্ত্রণালয় বেশ কয়েকটি দাবি মেনে নিতে রাজি হয়েছে, তবে আন্দোলন প্রত্যাহার করেননি রানিং স্টাফরা।

এই আন্দোলনের সঙ্গে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এবিএম শফিকুল আলম ব্যক্তিগতভাবে আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। ২০২৪ সালের ১৬ জানুয়ারি তিনি তার নিজস্ব ফেসবুক পোস্টে লিখেছিলেন, “আমার ছোট বোনের মেয়ে ডা. ইসরাত বারী তৃণা’র স্বামী গোলাম রাব্বানী আমাদের বাসায়। রাতের কিছু ছবি।”

এছাড়াও, ২০২১ সালের ২৪ জানুয়ারি তিনি তার ফেসবুকে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে ভোট চেয়ে পোস্ট দিয়েছিলেন। যদিও তার রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে জানতে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। একইভাবে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমানের সঙ্গেও যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।

রানিং স্টাফদের সুবিধা নিয়ে বিতর্ক দীর্ঘদিনের। ২০২২ সালে অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়ে দেয়, রেলের রানিং স্টাফরা যে অতিরিক্ত সুবিধা পেয়ে আসছিলেন, তা বাতিল করা হবে। তবে পরে দর-কষাকষির মাধ্যমে কিছু সুবিধা পুনর্বহাল করা হয়। বর্তমানে রানিং স্টাফরা ব্রিটিশ আমল থেকে চলে আসা সব সুবিধার পূর্ণ পুনর্বহাল দাবি করছেন, যা নিয়ে সরকার এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের আপত্তি রয়েছে।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “অর্থ মন্ত্রণালয় রানিং স্টাফদের বিশেষ সুবিধা পুরোপুরি বাতিল করেছিল, কিন্তু পরে অনেক দাবি মেনে নেওয়া হয়। এখনো অন্য কোনো সরকারি কর্মচারীরা এই ধরনের সুবিধা পান না। ফলে শুধুমাত্র রেলের জন্য এটি বহাল রাখা কঠিন হবে।”

তিনি আরও বলেন, “বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নানা বিষয়ে কাজ করছে। এই সময়ে হঠাৎ আন্দোলনের মাধ্যমে যাত্রীদের দুর্ভোগ সৃষ্টি করাটা প্রশ্নবিদ্ধ।”

রেল কর্তৃপক্ষ আলোচনার মাধ্যমে সংকট নিরসনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত কোনো সমাধান আসেনি। যাত্রীদের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে, বিশেষ করে যারা জরুরি প্রয়োজনে রেল ভ্রমণ নির্ভর করেন।

Advertisements