জ্যাকব জুমাকে জেলে নেওয়ার জেরে সমর্থকদের ব্যাপক আন্দোলন
Advertisements

আদালত অবমাননার দায়ে কারান্তরীণ দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমার সমর্থকদের চলমান বিক্ষোভে দেশটির আইনশৃঙ্খলা ও সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে এ পর্যন্ত ৪৫ জন নিহত হয়েছেন, গ্রেফতার হয়েছেন প্রায় ৮০০ জন। রাজ্য ও প্রাদেশিক কর্তৃপক্ষ এটি নিশ্চিত করেছে। তবে দেশটির পুলিশ ১০জন নিহত হয়ার খবর জানিয়েছে। খবর আল-জাজিরা।

রাজ্য ও প্রাদেশিক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নিহত ৪৫ জনের মধ্যে ২৬ জনই কাওয়াজুলু নাটাল প্রদেশের। বাকি ১৯ জন মারা গেছেন দেশটির সবচেয়ে জনবহুল প্রদেশ গাউটেংয়ে।

২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্টের পদে থাকা জ্যাকব জুমার বিরুদ্ধে দেশটির আদালতে দুর্নীতির মামলা চলছে। মামলার নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে গত ২৯ জুন তাকে তলব করেছিল আদালত, কিন্তু সেদিন আদালতে পৌঁছাতে ব্যর্থ হন জুমা।

ফলে, স্বাভাবিকভাবেই তিনি আদালত অবমাননার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হন এবং আদালত তাকে এর দায়ে ১৫ মাসের কারাবাসের সাজা ঘোষণাসহ অবিলম্বে আত্মসমর্পণের আদেশ দেন।

এ বিষয়ে আদালতের নির্ধারিত সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই গত ৭ জুলাই আত্মসমর্পণ করে কারাগারে যান জ্যাকব জুমা।

এদিকে, জ্যাকব জুমাকে কারাগারে নেওয়ার দিন থেকেই বিক্ষোভ শুরু হয় দক্ষিণআফ্রিকার কাওয়াজুলু-নাটাল প্রদেশে, যেখানে তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। তারপর সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে পুরো দেশে ছড়িয়ে পড়ে এই বিক্ষোভ।

দক্ষিণ আফ্রিকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জানিয়েছেন, গত ৭ দিনের বিক্ষোভে পুরো দক্ষিণ আফ্রিকাজুড়ে ব্যাপকমাত্রায় লুটপাটের ঘটনা ঘটছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লুটপাট হয়েছে কাওয়াজুলু নাটাল, গাউটেং প্রদেশ ও দেশটির বৃহত্তম শহর জোহানেসবার্গে।

তারা আরও জানান, সাধারণ মুদি ও খুচরা দোকান থেকে শুরু করে মার্কেট-সুপারমার্কেট ও শপিংমলগুলোতেও হামলা চালাচ্ছে লুটপাটকারীরা।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে মার্কিন বার্তাসংস্থা এপিকে বলেন, ‘খাবার, পোষাক, ইলেকট্রনিক সামগ্রী, আসবাবপত্র- সামনে যা পেয়েছে সব লুটপাট করছে তারা।’

বিক্ষোভ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করতে ইতোমধ্যে দেশের সামরিক বাহিনীকেও নিয়োগ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই কর্মকর্তা।

প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জ্যাকব জুমার ফাউন্ডেশন বলেছে, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি কারাগার থেকে মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকায় শান্তি থাকবে না।

এক টুইটবার্তায় বলা হয়েছে, ‘দক্ষিণ আফ্রিকায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রেসিডেন্ট জুমার মুক্তির সাথে সরাসরি যুক্ত।’

আল জাজিরার সংবাদদাতা ফাহমিদা মিলার জোহানেসবার্গ থেকে রিপোর্ট করেছেন, বিক্ষোভ দমনে পুলিশকে সহায়তা করতে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। ফলে বেশ কয়েকটি রাস্তায় সহিংসতা দেখা যায়নি। এখন অবশ্যই আশা করা যায় যে সেনাবাহিনীর উপস্থিতি দেশটির দাঙ্গা দমন সাহায্য করবে।’

দেশবাসীকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে সোমবার সন্ধ্যায় দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন চ্যানেলে ভাষণ দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা। ভাষণে তিনি বলেছেন, ‘যে কোনো ইস্যুতে জনবিক্ষোভ হতেই পারে, কিন্তু এখানে বিক্ষোভের নামে এক প্রকার সুবিধাবাদী অপরাধচর্চা হচ্ছে। জনগণকে উত্তেজিত করে অচলাবস্থা সৃষ্টির পাশাপাশি ব্যাপক লুটপাট ও চুরি-ডাকাতি চলছে। দক্ষিণ আফ্রিকার গণতন্ত্রে এই বিক্ষোভ একটি অন্ধকারাচ্ছন্ন একটি অধ্যায়। এর আগে দেশের কোনো আন্দোলন-বিক্ষোভে এ ধরনের প্রবণতা দেখা যায়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকার শান্তিকামী সাধরণ জনগণ আমাদের সঙ্গে আছেন। যারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়, তাদের অবশ্যই আমরা প্রতিহত করব। দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার ও শান্তিকামী জনগণ সবসময় গণতন্ত্র, শান্তি ও আইনের শাসনের পক্ষে।’

Advertisements