জেনেভায় জুলাই গণহত্যা
Advertisements

বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া জুলাই গণহত্যা নিয়ে জাতিসংঘের তথ্য অনুসন্ধানী মিশনের প্রতিবেদন উপস্থাপন করেছেন সংস্থাটির মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক। আজ (বুধবার) বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যায় সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে ভলকার তুর্ক বলেন, “জুলাই গণহত্যায় ব্যাপক ও সংগঠিতভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে। নারীদের ওপর সহিংসতা চালানো হয়েছে, অনেক শিশু ও তরুণ চিরতরে বিকলাঙ্গ হয়ে গেছে। এই তদন্ত পরিচালনায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সম্পূর্ণ সহায়তা করেছে এবং ভবিষ্যতেও বাংলাদেশকে সব ধরনের সহযোগিতা করবে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন।”

তিনি আরও বলেন, “এই বিষয়ে হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলকে নিয়মিত আপডেট দেওয়া হবে। এ ছাড়া, ড. মুহাম্মদ ইউনূসও ব্যক্তিগতভাবে এই ইস্যুর ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। এটি বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত, যেখানে সব ভেদাভেদ ভুলে সবাইকে নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।”

গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, “এই তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমেই জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের কাজ শেষ হয়ে যাবে না। বর্তমান সরকার বাংলাদেশের সব নাগরিকের মানবাধিকার নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

তিনি আরও বলেন, “সাধারণ মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস পুনরুদ্ধারে বিভিন্ন সংস্কার কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এরই মধ্যে ঐক্যমত্য কমিশন গঠন করা হয়েছে। যদিও রাজনৈতিক সহিংসতার বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে, তবে অধিকাংশ ঘটনার পেছনে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। সরকার এমন কোনো সহিংসতাকে সমর্থন করে না।”

সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, “সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ একপেশে বলা হবে। বরং সামগ্রিক সহিংসতায় মুসলমান ভুক্তভোগীর সংখ্যাই বেশি।”

গত ১২ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন জুলাই-আগস্টে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড নিয়ে একটি তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশেই অভ্যুত্থানের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নির্বিচারে গুলি চালায়।

এতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণও পেয়েছে সংস্থাটি।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ১৯ জুলাই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে শেখ হাসিনা আন্দোলনের সমন্বয়কারীদের গ্রেপ্তার, গুম এবং হত্যা করার নির্দেশ দেন। এরই ধারাবাহিকতায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে ‘কোর কমিটি’ গঠিত হয়, যার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ২০ জুলাই থেকে নিয়মিত বৈঠক শুরু করেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

এই প্রতিবেদনের প্রকাশের পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি বাংলাদেশ পরিস্থিতির দিকে আরও গভীরভাবে নিবদ্ধ হয়েছে। জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন জানিয়েছে, তারা বিষয়টি নিয়ে পর্যবেক্ষণ অব্যাহত রাখবে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে উৎসাহিত করবে।

Advertisements