Kanur
Advertisements

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় একটি ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, এক মুক্তিযোদ্ধাকে গলায় জুতার মালা পরিয়ে অপমান করা হচ্ছে। ঘটনাটি ঘটেছে গত রোববার, কুলিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে। লাঞ্ছনার শিকার ব্যক্তির নাম আবদুল হাই ওরফে কানু (৭৮), যিনি মুক্তিযোদ্ধা এবং কৃষক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে এই ভিডিও নিয়ে নানামুখী আলোচনা চলছে।

ভিডিওতে দেখা যায়, আবদুল হাইকে জুতার মালা পরিয়ে টানাহেঁচড়া করা হচ্ছে। স্থানীয় লোকজন তাকে এলাকা ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। জানা গেছে, ঘটনাটি স্থানীয় জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের দ্বারা সংগঠিত হয়েছে। পরিবারের দাবি, এ ঘটনার পেছনে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা কাজ করেছে।

আবদুল হাই এক সময় চৌদ্দগ্রামের সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। মুজিবুল হকের পক্ষে রাজনীতি করতে গিয়ে তিনি প্রতিপক্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে জুলুম-নির্যাতন চালিয়েছেন। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে স্থানীয় জামায়াতের নেতাদের ঘরছাড়া করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। পরে মুজিবুল হকের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হলে, তিনি নিজেও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের কোপানলে পড়েন।

জানা গেছে, মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই একজন সক্রিয় আওয়ামী লীগ নেতা। তিনি কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং কুমিল্লা দক্ষিণ জেলার সাবেক সহ-সভাপতি। তবে তাঁর বিরুদ্ধে রয়েছে নয়টি মামলা, যার মধ্যে হত্যার অভিযোগও রয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তিনি জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের এলাকা ছাড়া করেন এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর দমন-পীড়ন চালান বলে অভিযোগ।

জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের দাবি, অতীতে আবদুল হাই তাদের পরিবারের ওপর নিপীড়ন চালিয়েছেন। তাদের কেউ কেউ প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে এই ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। অন্যদিকে, গণমাধ্যমে এই ঘটনাটি মুক্তিযোদ্ধার লাঞ্ছনা হিসেবে নিন্দা করা হয়েছে। তবে প্রশ্ন উঠেছে, একজন মুক্তিযোদ্ধা যদি অন্যায় করেন, তার বিচার কীভাবে হওয়া উচিত?

অনেক গণমাধ্যমে এই ঘটনাটি মুক্তিযোদ্ধার লাঞ্ছনা হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে, যা ন্যায়বিচারের প্রশ্নকে আড়াল করছে বলে মনে করছেন অনেকে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মুক্তিযোদ্ধা হলেও অপরাধের দায় থেকে কেউ মুক্তি পেতে পারেন না। তারা অভিযোগ তুলেছেন, আওয়ামী লীগের শাসনামলে মুক্তিযোদ্ধাদের পৃষ্ঠপোষকতা করার নামে অপরাধকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়েছে।

মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানুকে (৭৮) লাঞ্ছিত করার ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেখে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এটিএম আক্তার উজ জামান গণমাধ্যমকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন–ভাতিসা ইউনিয়নের কুলিয়ারা গ্রামের আবদুল হক মজুমদারের ছেলে ইসমাইল হোসেন মজুমদার (৪৩), একই এলাকার মৃত সুলতান আহমেদ মজুমদারের ছেলে জামাল উদ্দিন মজুমদার (৫৮), মৃত এছাক ভুইয়ার ছেলে ইলিয়াছ ভুইয়া (৫৮), মৃত ছিদ্দিকুর রহমানের ছেলে আবুল কালাম আজাদ (৪৮) ও চাঁদপুর জেলার মইশাদী গ্রামের মো. জাকির হোসেনের ছেলে ইমতিয়াজ আবদুল্লাহ সাজ্জাদ (১৯)।

কিছু পক্ষ বলছে, মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানুর গলায় জুতার মালা পরানোর ঘটনাটি নিন্দনীয়। তবে তারা এটাও দাবি করছে, কানুর বিরুদ্ধে যেসব গুরুতর অপরাধের অভিযোগ রয়েছে, তা কি এই ঘটনাকে আড়াল করবে? অভিযোগ রয়েছে, তিনি অতীতে রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন, হত্যা ও ধর্ষণের অপরাধ রয়েছে এবং সাধারণ মানুষের ওপর দমনপীড়ন চালিয়েছেন। তাদের প্রশ্ন, একজন মুক্তিযোদ্ধা হলেও যদি তিনি অপরাধ করে থাকেন, তবে তার কি বিচার হবে না? জুতার মালার ঘটনাটি কি তার অপরাধ ঢাকার হাতিয়ার হয়ে দাঁড়াবে?

Advertisements