
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ‘আয়নাঘর’ নামে কুখ্যাতি পাওয়া গোপন বন্দিশালাগুলোর ভয়াবহতা চাক্ষুষ না করলে বিশ্বাস করাটা কঠিন ছিল বলে মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। বৃহস্পতিবার নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেন।
চিফ প্রসিকিউটর জানান, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, গুম কমিশন, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সাংবাদিক ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার সমন্বয়কসহ একটি দল গোপন বন্দিশালাগুলো পরিদর্শন করেছেন। এই বন্দিশালাগুলোতে নির্যাতনের বিভীষিকাময় চিত্র তাদের সামনে উন্মোচিত হয়েছে।
অমানবিক নির্যাতনের বর্ণনা
গোপন বন্দিশালাগুলোর ভয়াবহতা তুলে ধরে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, “সেখানে বন্দীদের ইলেকট্রনিক শক দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল। চোখ বেঁধে রাখা হতো। মাত্র তিন ফিট বাই তিন ফিট কিংবা দুই ফিট বাই দুই ফিটের ছোট সেলে বন্দীদের আটক রাখা হতো। এমন নির্মম নির্যাতন করা হতো যা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করাই কঠিন।”
তিনি আরও বলেন, গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার পরিকল্পিতভাবে ভিন্নমত দমন এবং গোপন হত্যার একটি সংস্কৃতি তৈরি করেছিল, যা এখন উন্মোচিত হয়েছে।
১১ বছরের মেয়ের করুণ বন্দীদশা
একজন নারী ও তার ১১ বছরের কন্যাশিশুর নির্মম বন্দীদশার কথা তুলে ধরে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, “একটি ১১ বছরের মেয়েকে তার মায়ের সঙ্গে তুলে নেওয়া হয়েছিল। মেয়েটির সামনে তার মাকে হাতকড়া পরিয়ে নির্মম নির্যাতন করা হয়। মেয়েটির মা শারীরিকভাবে মোটা ছিলেন বলে হাতকড়া তার শরীরে কেটে বসে যায়। বন্দীদশার পুরো সময় মেয়েটির চোখ বাঁধা থাকত। এমনকি তার মা যখন বাথরুমে যেতেন, তখনও হাতকড়া খোলা হতো না।
তিনি আরও জানান, “আজও মেয়েটির মা ফিরে আসেননি। ধারণা করা হচ্ছে, তাকে হত্যা করে লাশ গুম করা হয়েছে। তবে গতকাল সেই ১১ বছরের মেয়েটি তার বন্দিশালাটি শনাক্ত করতে পেরেছে।”
প্রমাণ নষ্টের চেষ্টা
গোপন বন্দিশালাগুলোর আলামত নষ্ট করার বিষয়টিও তুলে ধরে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, “অনেক গুরুত্বপূর্ণ আলামত আমরা উদ্ধার করেছি। তবে দেখা গেছে, বন্দিশালা ও নির্যাতন কেন্দ্রগুলোর ব্যাপক আলামত নষ্ট করা হয়েছে।”
তিনি জানান, “যারা এই নির্যাতন কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত, আমরা তাদের বিচারের মুখোমুখি করতে চাই।”
গোপন বন্দিশালার ভয়াবহতা উন্মোচনের মাধ্যমে নির্যাতিতদের প্রতি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে সরকার উদ্যোগী হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।