গুজবে কান দেবেন না
Advertisements

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশে নানা বিষয়ে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো এসব অপপ্রচারের জবাব দিতে হবে। গতকাল ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের ৩০তম জাতীয় কাউন্সিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ব্যাংকে টাকা নাই বলে কিছু গুজব ছড়ানো হচ্ছে। টাকা নেই বলে অনেকে টাকা তুলে ঘরে নিয়ে যাচ্ছে। ব্যাংকের থেকে টাকা নিয়ে ঘরে রাখলে চোরের পোয়াবারো, তারা চুরি করে খেতে পারবে। সে ব্যবস্থা করে দিচ্ছে কেউ কেউ, এদের সঙ্গে চোরের সখ্যতা রয়েছে কিনা সে প্রশ্নও তোলেন তিনি। তিনি বলেন, আল্লাহর রহমতে আমাদের কোথাও কোনো সমস্যা নাই। প্রতিটি ব্যাংকেই টাকা আছে। কাজেই আমি বলবো গুজবে কেউ কান দেবেন না। এটাই সকলের কাছে আমার অনুরোধ।

মিথ্যা কথা বলে মানুষকে তারা বিভ্রান্ত করতে চায়। একটা শ্রেণি আছে তারা এটা করবেই আমি জানি। কারণ মিথ্যা কথায় তারা পারদর্শী। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি আর সেটাকেই আমাদের বিরুদ্ধে কাজে লাগায় তারা।

কাজেই এদিকে সকলের বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে। তিনি বলেন, সরকার ৩৫ লাখ মানুষকে ঘর করে দিয়েছে। জাতির পিতার এই বাংলাদেশে কেউ ভূমিহীন-গৃহহীন থাকবে না। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নিজ নিজ এলাকায় ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষ খুঁজে বের করার আহ্বান জানান তিনি। বিএনপি’র সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা দেশের স্বাধীনতাই চায়নি তারা এ দেশের উন্নয়ন কখনোই দেখবে না। মানুষ সামনের দিকে আগায়, বিএনপি ক্ষমতায় এলে পেছনে যায়, ভূতের মতো। তারা মনে হয়, আমাদের দেশে ভূতের রূপ নিয়েই আসে। তিনি বলেন, মানুষের ভোট চুরি করলে মানুষ ছেড়ে দেয় না-এটা খালেদা জিয়ার মনে থাকা উচিত। জনগণ স্বতঃফূর্তভাবে আমাদের ভোট দেয়। ভোট কারচুপির কালচার দিয়েছে জিয়াউর রহমান। হ্যাঁ-না ভোট দিয়ে জনগণের ভোট ছিনিয়ে নিয়েছে। না ব্যালট পাওয়া যায়নি। সব হ্যাঁ ভোট ছিল। সরকারের ঢালাও সমালোচক তথাকথিত বুদ্ধিজীবী শ্রেণির সমালোচনায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক জ্ঞানী-গুণী মানুষও জিয়ার সঙ্গে হাত মিলিয়ে তখন কথা বলেছিলেন।

এখনো অনেকে আছেন খালেদা জিয়া-তারেক রহমানের সঙ্গে। মানিলন্ডারিং, অস্ত্র কারবারি ও ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার আসামি তারেক। খালেদা জিয়া এতিমের টাকা আত্মসাতের মামলার আসামি। এই অপরাধীদের সঙ্গে এখন অনেক জ্ঞানী-গুণীও গণতন্ত্রের কথা বলেন। তারা বুদ্ধিজীবী নন, বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীজীবী। তারা খালেদা-তারেকের সঙ্গে গিয়ে মিলেছেন। ছাত্রদলের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে খালেদা জিয়ার পেটোয়া বাহিনী সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করে দেয়। ঢাবিতে রাতের অন্ধকারে ভিসিকে সরিয়ে নতুন আরেকজনকে বসিয়ে দিয়ে ভিসির পদটাও দখল করে নেয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই শিক্ষকসহ বহু নেতাকর্মীকে হত্যা করে। তাদের অত্যাচার নির্যাতনে সারা দেশ ছিল নির্যাতিত। শুধু ক্ষমতায় থাকাকালেই নয়, ক্ষমতার বাইরে থেকেও তাদের অগ্নিসন্ত্রাসের কথা সবার জানা। ২০১৩-২০১৪ সালে প্রায় ৩ হাজার মানুষকে দগ্ধ করে তারা। বাস-লঞ্চ-রেল কোনো কিছুই তাদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি। তিনি বলেন, বিএনপি’র কাজই হচ্ছে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করা। খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ‘আওয়ামী লীগকে শিক্ষা দিতে ছাত্রদলই যথেষ্ট’-এর প্রতিবাদে আমি ছাত্রলীগের হাতে বই-খাতা-কলম তুলে দিয়েছিলাম। বলেছিলাম, শিক্ষা শুধু নিজেরাই গ্রহণ করবে না, গ্রামে গিয়ে নিরক্ষর মানুষকে শিক্ষা দেবে।

তারা সেটিই করেছে। আমাকে রিপোর্টও দিয়েছে। আমাদের পেটোয়া বাহিনী লাগে না। তিনি বলেন, আমি চাই বাংলাদেশে আমাদের যারা নেতাকর্মী তারা সেইভাবে গড়ে উঠবে যে এই দেশের স্বাধীনতার চেতনা কেউ মুছে ফেলতে না পারে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস কেউ মুছে ফেলতে না পারে, খুনি, রাজাকার, আলবদর, যুদ্ধাপরাধী এরা যেন কোনোদিন এই দেশে আর ক্ষমতায় আসতে না পারে, সেইভাবেই জনমত সৃষ্টি করতে হবে। যে যাই করুক না কেন লেখাপড়াটা শিখতে হবে। লেখাপড়ায় মনোযোগ দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৪র্থ শিল্প বিপ্লবে কাজ করতে গেলে প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ মানব শক্তি দরকার।

কাজেই আমাদের এই যুবসমাজ যারা আমাদের ভবিষ্যৎ, তারাই আমার ২০৪১- এ উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার সৈনিক। তাদেরকে আমরা দক্ষ করে গড়ে তুলতে চাই। তারা প্রযুক্তি এবং কারিগরি জ্ঞানে সমৃদ্ধ হবে এবং আমাদের আরও উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দোয়া ও আশীর্বাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেকেরই, যারা মেধাবী তাদের নিজেদের জীবন- জীবিকার ব্যবস্থা যেমন নিজেদের করতে হবে, কারিগরি শিক্ষা নিতে হবে, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষা দিতে হবে। কারণ, আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনা করতে হলে দক্ষ প্রশাসন ব্যবস্থার দরকার। রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে রাজনীতিও যেমন দরকার আবার সেইভাবে আমাদের প্রশাসন বা কারিগরি সব ধরনের শিক্ষার দরকার রয়েছে।

শেখ হাসিনা জাতির পিতার বক্তব্য ‘আমাদের ইতিহাস ছাত্রলীগের ইতিহাস’ উদ্ধৃত করে বলেন, ‘গণতান্ত্রিক প্রতিটি আন্দোলনে শহীদদের তালিকায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীই বেশি। প্রতিটি সংগ্রামেই ছাত্রলীগের অবদান রয়েছে। আগামী দিনেও তারা বাংলাদেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে- এই আশাই করি।’ প্রধানমন্ত্রী এর আগে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে ছাত্রলীগ কাউন্সিলের উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে তিনি ছাত্রলীগের ওয়েবসাইট ও বিসিএল কমিউনিটি অ্যাপের উদ্বোধন করেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য ও দপ্তর সম্পাদক ইন্দ্রনীল দেব শর্মা রনি কাউন্সিলে সাংগঠনিক প্রতিবেদন ও শোক প্রস্তাব পেশ করেন।

সূত্রঃ মানবজমিন

Advertisements