গাজা উপত্যকায় চলমান সংঘাতের অবসান ঘটাতে যুদ্ধবিরতির আলোচনা আশাব্যঞ্জক পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস এবং আরও দুটি প্রধান সংগঠন। হামাস, ইসলামী জিহাদ আন্দোলন এবং পপুলার ফ্রন্ট মিশরের রাজধানী কায়রো থেকে এক যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতি যেকোনো সময়ের তুলনায় যুদ্ধবিরতির কাছাকাছি।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরাইল যদি নতুন কোনো শর্ত আরোপ না করে, তাহলে যুদ্ধবিরতি এবং বন্দি বিনিময়ের চুক্তি খুব শিগগিরই সম্ভব। হামাসের এক শীর্ষ নেতা ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানান, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে আলোচনা উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। বেশিরভাগ বিষয়ে দুই পক্ষ একমত হয়েছে। তবে কিছু অমীমাংসিত বিষয়ের কথা উল্লেখ করে তিনি জানান, তা যুদ্ধবিরতির পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে না।
তিনি আরও বলেন, “চলতি বছরের শেষ হওয়ার আগেই চুক্তি সম্পন্ন হতে পারে, যদি ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু নতুন কোনো শর্ত আরোপ না করেন।” তবে তিনি নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি, কারণ এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে তার কথা বলার অনুমতি নেই।
গত শুক্রবার হামাস, ইসলামী জিহাদ এবং পপুলার ফ্রন্টের প্রতিনিধিরা কায়রোতে মিলিত হন। সেখানে যুদ্ধবিরতির বিষয়গুলো ছাড়াও যুদ্ধ-পরবর্তী গাজার প্রশাসন নিয়ে আলোচনা হয়।
চলতি মাসের শুরুর দিকে কায়রোয় হামাস এবং ফাতাহ আন্দোলনের প্রতিনিধিরা একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করেন। এ কমিটি যুদ্ধ-পরবর্তী গাজার প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করবে। ফিলিস্তিনি স্বশাসন কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের অনুমোদনক্রমে ১০ থেকে ১৫ সদস্যের এ কমিটি গাজার অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, মানবিক ত্রাণ এবং পুনর্গঠনের বিষয়গুলো দেখভাল করবে।
যদিও আলোচনা ইতিবাচক ধারায় এগোচ্ছে, তবে ইসরাইলের অবস্থান নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা রয়েছে। যুদ্ধবিরতি প্রক্রিয়ায় ইসরাইল নতুন শর্ত আরোপ করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন হামাসের নেতারা।
গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ ও অবরোধ দীর্ঘদিন ধরে মানবিক সংকটের সৃষ্টি করেছে। যুদ্ধবিরতি চুক্তি কেবল তাৎক্ষণিক সংঘাত বন্ধ করতে পারে, তবে দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতা এবং পুনর্গঠনের জন্য প্রয়োজন যথাযথ রাজনৈতিক সমাধান। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় ভূমিকা এবং আর্থিক সহায়তা এই অঞ্চলের পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য এই যুদ্ধবিরতি একটি নতুন আশার আলো জ্বালাতে পারে, যা তাদের মানবিক সংকট লাঘবে সহায়তা করবে এবং একটি শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নেবে।