উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনের উদ্দেশ্যে মঙ্গলবার রাত ১১টা ২৫ মিনিটে ঢাকা ত্যাগ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। হাজার হাজার নেতাকর্মী সড়কের দু’পাশে দাঁড়িয়ে তাকে বিদায় জানান। কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তিনি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন।
রাত ৮টা ১৫ মিনিটে গুলশানের বাসা থেকে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে রওনা দেন বেগম জিয়া। সড়কের দুই পাশে দলীয় নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে ঢল নামে। নেতাকর্মীদের ভালোবাসা ও সমর্থনের কারণে এয়ারপোর্টে পৌঁছাতে তার প্রায় দুই ঘণ্টা বেশি সময় লেগে যায়। পুরো সড়কজুড়ে ছিল নেতাকর্মীদের মানবপ্রাচীর। গাড়ি থেকে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে হাত নেড়ে বিদায় জানান বেগম জিয়া।
রাত ১০টা ৫০ মিনিটে ভিভিআইপি গেট দিয়ে তিনি বিমানবন্দরে প্রবেশ করেন। তার সঙ্গে ছয়জন চিকিৎসক, নার্স, ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ মোট ১৫ সদস্য রয়েছেন। বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তিনি কাতারের দোহায় ট্রানজিট নিয়ে যুক্তরাজ্যের হিথ্রো বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন।
হিথ্রো বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানাবেন তার বড় ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমানসহ যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতাকর্মীরা। লন্ডন পৌঁছানোর পর সরাসরি তাকে লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি করা হবে।
লন্ডনে যাওয়ার মাধ্যমে দীর্ঘ প্রায় সাড়ে সাত বছর পর বড় ছেলে তারেক রহমান, পুত্রবধূ জোবাইদা রহমান এবং নাতনি জায়মা রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন খালেদা জিয়া। এর আগে ২০১৭ সালের জুলাই মাসে চোখ ও পায়ের চিকিৎসার জন্য লন্ডনে গিয়েছিলেন তিনি। এবার চিকিৎসার পাশাপাশি দলীয় নেতৃত্ব ও ভবিষ্যৎ রাজনীতি নিয়েও মা-ছেলের মধ্যে আলোচনা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ ও কিডনির জটিলতাসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছেন। ২০১৮ সালে দুর্নীতির মামলায় কারাগারে যাওয়ার পর তার শারীরিক অবস্থা ক্রমশ অবনতি হয়। দুই বছর কারাগারে থাকার পর গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তিনি বাসায় ফিরেন। পরিবারের পক্ষ থেকে সাতবার বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হলেও তা প্রত্যাখ্যান করেছিল তৎকালীন সরকার।
৫ আগস্ট গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতির বিশেষ আদেশে মুক্তি পান খালেদা জিয়া। আদালত তার বিরুদ্ধে থাকা দুর্নীতির মামলাগুলো বাতিল করে। এরপর মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শে লন্ডনে চিকিৎসার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। লন্ডন ক্লিনিকে ডা. প্যাট্রিক কেনেডির তত্ত্বাবধানে তার চিকিৎসা হবে।
বিদায়ের সময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন। খালেদা জিয়ার এই সফর দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে গভীর আবেগ ও সমর্থনের প্রতিফলন ঘটিয়েছে।
বেগম জিয়ার দ্রুত আরোগ্য এবং পবিত্র ওমরাহ শেষে সুস্থভাবে দেশে ফেরার জন্য দলীয় নেতাকর্মীরা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।