কোন ভেষজ চায়ের কী গুণ
Advertisements

সবাই সুস্থ থাকার জন্য নানা রকম চেষ্টা করেন। কেউ স্বাস্থ্যসম্মত ভেষজ চা পান করেন। বাজারে নানা রকম ভেষজ চা পাওয়া যায়। তবে, সে সবের চেয়ে ঘরোয়া টাটকা উপাদান দিয়ে নিজে বানিয়ে নিলে বেশি উপকার পাওয়া যায়।

সব চা কী সবাই খেতে পারেন? কোন চা কখন খাবেন? কীভাবে পান করা উচিত ভেষজ চা? এমন কয়েকটা পরামর্শ রইল।

তুলসি চা 

একবাটি পানিতে একমুঠো তুলসি পাতা ফুটিয়ে নিন। ভালোভাবে ফুটলে আঁচ কমিয়ে আরও ১০ মিনিট ফোটান। এরপর এতে এক চামচ মধু আর দু-চামচ লেবুর রস মেশাতে হবে। তাহলে এই চায়ে মধু দেবে এনার্জি আর  লেবু দিবে ভিটামিন সি। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কাজে লাগবে।

একই সঙ্গে তুলসির প্রভাবে জ্বর-সর্দি-কাশির প্রকোপ কম থাকবে। নিয়মিত খেলে প্রদাহের প্রবণতা কমবে, বাড়বে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা।

শুকনো কাশির প্রকোপ কমাতে চাইলে এতে ধনে ও আদা মিশিয়ে নিন। প্রদাহের প্রবণতাও কমবে তাতে। কীভাবে বানাবেন, দেখুন।

এক লিটার পানিতে দু-চামচ আদা কুচি, চার চামচ ধনে ও একমুঠো তুলসি পাতা দিয়ে কম আঁচে ভাল করে ফোটান, যতক্ষণ না পানি অর্ধেক হয়ে যায়। এবার ছেঁকে নিয়ে মধু ও লেবু মিশিয়ে খান।
কয়েকটি বিশেষ ক্ষেত্রে এই চা না খাওয়াই ভাল। যেমন-

• গর্ভাবস্থায় নিয়মিত খাবেন না। কারণ তুলসিতে আছে এস্ট্রাপানি যা জরায়ুর সংকোচন বাড়াতে পারে।

• ডায়াবেটিসের ওষুধ খেলে বা ইনসুলিন নিলে নিয়মিত খাওয়ার আগে বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে নেবেন। কারণ তুলসি রক্তে সুগারের মাত্রা কমায় বলে জানা গেছে।

• রক্ত পাতলা রাখার ওষুধ খেলেও সাবধান। কারণ তুলসিও রক্ত পাতলা রাখে।

• বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা থেকে সম্প্রতি জানানো হয়েছে, যাদের নিয়মিত অ্যাসিটামিনোফেন জাতীয় ব্যথার ওষুধ খেতে হয়, তারা তুলসি খাওয়ার আগে দু-বার ভাববেন। কারণ দুইয়ের মিলিত প্রভাবে লিভারের কিছু ক্ষতি হতে পারে।

দারুচিনি চা 

দারুচিনি, গোলমরিচ, লেবুর রস ও মধু দিয়ে বানাতে পারেন ভেষজ চা। এক চামচ দারুচিনির গুড়ো, সিকি চামচ গোলমরিচ গুড়ো, এক চামচ লেবুর রস ও এক চামচ মধুর মধ্যে এক কাপ ফুটন্ত পানি দিয়ে ভাল করে মিশিয়ে ছেঁকে নিন।

দারুচিনির কুমারিন, গোলমরিচের পিপারিন প্রদাহের প্রবণতা কমাবে, বাড়াবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। তবে কুমারিন বেশি খাওয়া ঠিক না। লিভারের ক্ষতি হতে পারে। আবার সুগার কমাতে পারে বলে যার ডায়াবেটিসের ওষুধ চলছে, তিনি বুঝেশুনে খাবেন।

অশ্বগন্ধা চা

রোজ সকালে বা বিকেলে এক কাপ অশ্বগন্ধার চা খেতে পারেন। এক কাপ ফুটন্ত পানিতে এক চা-চামচ অশ্বগন্ধা মূলের গুড়ো দিয়ে ঢাকা দিয়ে রাখুন মিনিট ১০-১৫। ছেঁকে লেবুর রস ও মধু দিয়ে খান।

এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ার পাশাপাশি প্রদাহের প্রবণতা কমবে। অশ্বগন্ধার জীবাণুনাশক গুণও আছে। কমবে মানসিক চাপ-অবসাদ ও বয়সজনিত ক্ষয়-ক্ষতির হার।

ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ সাইকোলজিক্যাল মেডিসিনে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন এই চা খেলে খুব সহজে সতেজ ও ফুরফুরে হওয়া যায়।

আদা চা

এক চা-চামচ আদা কুচি, দুটো লবঙ্গ, এক ইঞ্চি দারুচিনি থেঁতো করে দু-কাপ পানি দিয়ে ফোটান। তাতে দিন ৩ ইঞ্চি কমলালেবুর খোসা। কম আঁচে ফোটান ১৫ মিনিট। দেড় চামচ মধু মিশিয়ে খান। জ্বর-সর্দি-গলা ব্যথা, সবের আরাম হবে।

হলুদ চা

আধ চামচ কাঁচা হলুদ বাটা ও সিকি চামচ গোলমরিচের গুঁড়োতে ফুটন্ত পানি মেশান। এতে মেশান একটা গোটা লেবুর রস আর দেড় চামচ মধু। সকাল-বিকেল খেলে ইমিউনিটি নিয়ে আর ভাবতে হবে না।

পুদিনা চা

ফুটন্ত পানিতে মেশান রোজমেরি।  তাতে দিন ১০-১২টা পুদিনা পাতা। দেওয়ার আগে একটু কুচি কুচি নেবেন যাতে গন্ধটা পুরোপুরি বেরোয়। ১৫ মিনিট ঢাকা দিয়ে রাখুন। তৈরি পুদিনা চা।

চায়ের সঙ্গে ‘টা’
সাধারণ চায়ে ক্যাফেইন, ট্যানিন ইত্যাদি থাকে বলে খালি পেটে খেলে কারও কারও অম্বলের সমস্যা বাড়ে। ভেষজ চায়ে সে ভয় নেই। কাজেই ‘টা’ না খেলে কোনো ক্ষতি নেই। বিস্কুট জাতীয় কিছুও খুব একটা না খাওয়াই ভাল। কিন্তু অভ্যাস বলে কথা। কিছু একটা না খেলে অস্বস্তি হয়। কাজেই স্বাস্থ্যকর কিছু খান।

বাদাম খেতে পারেন। চিনে বাদাম খেলেও উপকার হবে। পেট ভরা থাকবে অনেকক্ষণ। তবে সেটিও পরিমাণমতো। সবমিলিয়ে পুষ্টিকর খাবার খান, সুস্থ থাকুন।

সূত্র: আনন্দবাজার

Advertisements