মাল্টিপ্লেক্স
Advertisements

সময়ের সঙ্গে দেশের সিনেমা দর্শকের কাছে মাল্টিপ্লেক্সের জনপ্রিয়তা বাড়ছিল। এর মধ্যে করোনা মহামারির আঘাতে ছন্দপতন, থমকে গেল সবকিছু। লকডাউনে দর্শক যতই মোবাইল কিংবা টেলিভিশনে সিনেমা দেখুক, বড় পর্দায় সিনেমা দেখার আবেদন ছিল, আছে আর থাকবে বলেই মত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের।

দেশের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতির সঙ্গে রুচিতে এসেছে পরিবর্তন। তারা সুন্দর ও আরামদায়ক পরিবেশে ছবি দেখতে চায়। সেই চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশে তৈরি হয়েছে বেশ কয়েকটি মাল্টিপ্লেক্স। দিন দিন ছবিপ্রেমীদের কাছে তা জনপ্রিয়ও হয়ে উঠেছে। প্রযোজক–পরিচালকেরাও মাল্টিপ্লেক্সের কথা ভেবে ছবি বানাচ্ছেন। কিন্তু করোনায় বিপুল ক্ষতির মুখে পড়েছে এই সেক্টর। সরকার এদিকে নজর না দিলে মাল্টিপ্লেক্স বন্ধ করে দেওয়ার কথাও ভাবছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি শপিং মলে তিনটি প্রেক্ষাগৃহ দিয়ে ১৫ বছর আগে যাত্রা শুরু করে স্টার সিনেপ্লেক্স। প্রথম দুই বছর শুধুই ক্ষতি গুনতে হয়। তারপর হলিউডের গ্ল্যাডিয়েটর এবং বাংলাদেশের মোল্লা বাড়ির বউ সিনেমা দুটি দিয়ে ঘুরে দাঁড়ায় সিনেপ্লেক্স। এখন প্রতিষ্ঠানটি হলিউডের সঙ্গে মিলিয়ে একই দিনে ছবি মুক্তি দেয়। বসুন্ধরা সিটি শপিং মল ছাড়া ঢাকার ধানমন্ডি, মিরপুর ও মহাখালী মিলিয়ে সিনেপ্লেক্সের ১৫টি প্রেক্ষাগৃহ রয়েছে। যমুনা ফিউচার পার্ক কর্তৃপক্ষ তাদের বহুতল বিপণিবিতানে ব্লকবাস্টার সিনেমাস নামে সাতটি প্রেক্ষাগৃহ চালু করে। ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামে দুটি আর বগুড়ায় একটি করে মাল্টিপ্লেক্স রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্টার সিনেপ্লেক্স প্রতি মাসে দেড় থেকে দুই কোটি টাকা ক্ষতি গুনছে। গেল পাঁচ মাসের বেশি সময় ধরে এভাবেই চলছে। শপিং মল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়ে স্টার সিনেপ্লেক্সের চেয়ারম্যান মাহবুব রহমান বলেন, সেন্সর পাওয়া সিনেমাগুলো দ্রুত মুক্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। শুধু সিনেমা হল খুললেই হবে না, নতুন ছবি মুক্তি না পেলে দর্শক হলে আসবেন না। যমুনা গ্রুপের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার জাহিদ হোসেন চৌধুরী বললেন, ‘আমরা খুব ঝামেলায় আছি। যত দ্রুত প্রেক্ষাগৃহ খুলে দেবে, তত ভালো। আমাদের প্রেক্ষাগৃহে শীতাতপের যন্ত্রসহ অনেক যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে স্থাপনা আর ইন্টেরিয়র ডিজাইন নষ্ট হচ্ছে। অনেক সিনেমাও কিনে রেখেছি, দেরিতে মুক্তি দেওয়া হলে দর্শক আগ্রহও হারাবেন। প্রতিনিয়ত দর্শকেরা ফোন করেন। তাঁদের বক্তব্য, মার্কেট তো খুলে দেওয়া হয়েছে, প্রেক্ষাগৃহ খুলবে কবে? আমরা বলছি, সরকারের অনুমতি না পেলে আমাদের করণীয় কিছু নেই।’ তরুণ কয়েকজন নির্মাতা বললেন, ‘কয়েক বছর ধরে আমরা ছবি বানাচ্ছি। আমাদের প্রধান টার্গেট থাকে সিনেপ্লেক্সে যেন ছবি মুক্তি দেওয়া হয়। কারণ, এখানে যে নতুন দর্শক আছেন, তা আমাদের খুব প্রয়োজন। নতুন দিনের এই নতুন দর্শকেরা আমাদের আগামী।’

স্টার সিনেপ্লেক্স প্রতি মাসে দেড় থেকে দুই কোটি টাকা ক্ষতি গুনছে। ছবি: সংগৃহীত
ছবি- প্রথম আলো

চট্টগ্রাম সিলভার স্ক্রিনের অন্যতম অংশীদার ফারুক আহমেদ জানালেন, ‘এমনিতে আমরা ক্ষতির মধ্যে আছি। এভাবে চলতে থাকলে আরও বেশি সংকটের মধ্যে পড়তে হবে। ভাড়া, রক্ষণাবেক্ষণ ফি—সবই কিন্তু দিতে হচ্ছে। অথচ আয় নেই! এদিকে দর্শকের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত ফোন আসছে, ফেসবুকে তাঁরা প্রেক্ষাগৃহ খুলে দেওয়ার ব্যাপারে আপডেট চাইছেন, আমরা কিছুই বলতে পারছি না।’

সাড়া জাগানো চলচ্চিত্র আয়নাবাজির নির্মাতা অমিতাভ রেজাও প্রেক্ষাগৃহ খুলে দেওয়ার পক্ষে। তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে এখন তো পরিস্থিতি ভয়াবহ। আমাদের ওটিটি বাজার এখনো ভালো অবস্থানে নেই। মাল্টিপ্লেক্স আমাদের সবচেয়ে বড় ভরসা। যেভাবে হোক, বিদেশি সিনেমা আমদানি করে হলেও মাল্টিপ্লেক্স বাঁচাতে হবে। দরকার হলে ভারতীয় ছবিও আনা যেতে পারে। এসব নিয়ে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনা দরকার।’

স্টার সিনেপ্লেক্স সংবাদ সম্মেলন করে নিজেদের সমস্যার কথা জানায়। ‘সেভ বিডি সিনেমা’ হ্যাশট্যাগ দিয়ে সেখানে তারা সরকারের কাছে সাতটি দাবি তুলে ধরে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো নগরবাসীর বিনোদনের জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিগগিরই সিনেমা হল খুলে দেওয়া, জরুরি আর্থিক সহায়তা কিংবা প্রণোদনা তহবিল ঘোষণা করা, সিনেমা হলের টিকিটের ওপর সব ধরনের মূসক ও কর মওকুফের সুযোগ প্রদান, সুদবিহীন ঋণ প্রদানের অনুমোদন এবং উপমহাদেশীয় ভাষার চলচ্চিত্র শর্তহীনভাবে আমদানির অনুমতি প্রদান।

প্রেক্ষাগৃহের মালিক, নির্মাতা, প্রযোজক, দর্শক ও সিনেমার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যরা—সবার প্রাথমিক চাওয়া একটাই, যত দ্রুত সম্ভব খুলে দিতে হবে মাল্টিপ্লেক্স।

 

Advertisements