বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বাংলাদেশের কোনো নির্বাচন হবে না এবং এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এখন যারা বিরোধিতা করবে তারা গণশত্রু হিসেবে ধিকৃত হবে এবং তাদের চিহ্নিত করা হবে গণশত্রু হিসেবে।
শনিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সিলেট সরকারি আলিয়া মাদরাসা মাঠে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
দেশব্যাপী বিদ্যুতের নজিরবিহীন লোডশেডিং, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি, গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধি, পুলিশের গুলিতে দেশব্যাপী বিএনপি নেতাকর্মীদের হত্যার প্রতিবাদ, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে দেশব্যাপী বিভাগীয় গণসমাবেশের অংশ হিসেবে সিলেটে এ গণসমাবেশ করে বিএনপি।
মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়া সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে বিধান সন্নিবেশিত করেছিলেন সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না।
তিনি বলেন, ‘সরকার লম্বা লম্বা কথা বলে। তারা বলে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। কোন সংবিধান? যে সংবিধান কাটাছেঁড়া করেছো। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছো। সে সংবিধান আমরা মানি না।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের দফা এক, দাবি এক- এ সরকারের পদত্যাগ। শেখ হাসিনার পদত্যাগ। আর এর ফয়সালা হবে রাজপথে। রাজপথেই সরকারকে পরাজিত করে জনগণের সরকার করবো।’
‘অবিলম্বে শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে। সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে এবং মধ্যবর্তী বা নির্বাচনকালীন সময়ের জন্য কেয়ারটেকার সরকার করতে হবে,’ বলেন তিনি।
তিনি বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের বিচার হতে জনতার আদালতে এবং এ বিচার হবে ভোট চুরি ও ডাকাতির জন্য।
সিলেট অঞ্চলের বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর গুমের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, তার দলের শত শত নেতাকর্মী খুন ও গুমের শিকার হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘কিন্তু এখন মানুষ জেগে উঠেছে। আর হুমকি দিয়ে লাভ হবে না। দাবি আদায় না করে মানুষ আর ঘরে ফিরে যাবে না। আমাদের লক্ষ্য একটাই- ভোটের অধিকার ফিরিয়ে নেয়া।’
তিনি সব রাজনৈতিক দলকে এ দাবি আদায়ে রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানান এবং বলেন, তারা সবাই মিলেই লড়াইয়ের মাধ্যমে সরকারকে পরাজিত করবেন।
শনিবার বেলা ১১টায় সিলেট সরকারি আলিয়া মাদরাসা ময়দানে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত ও সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে শুরু হয় এই গণসমাবেশ।
সমাবেশ মঞ্চের ঠিক মাঝখানে চেয়ার ফাঁকা রেখে চেয়ারে খালেদা জিয়ার একটি ছবি রাখা হয়।
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান।
সিলেট বিএনপি নেতা ইমরান আহমেদ চৌধুরী, মিফতাহ্ সিদ্দিকী, কাউন্সিলর রেজাউল হাসান কয়েস লোদী ও কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীমের সঞ্চালনায় অন্যদের মাঝে বক্তব্য রাখেন, কেন্দ্রীয় দলীয় নেতা ডা: এ জেড এম জাহিদ হোসেন, খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, সৈয়দ মোজাম হোসেন আলাল, সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান, নিখোঁজ বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর পত্নী তাহসিনা রুশদির লুনা, ড. এনামুল হক চৌধুরী, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ডা: সাখাওয়াত হোসেন জীবন, নাসের রহমান, জি কে গউছ, কলিম উদ্দিন আহমেদ মিলন, হেলেন জেরিন খান, নিলুফার ইয়াসমিন মনি, সাম্মি আক্তার, আফরোজা আব্বাস, শাম্মি আক্তার, ইসরাক হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক, মিজানুর রহমান চৌধুরী, সালাউদ্দিন আহমেদ টুকু, অ্যাডভোকেট হাদিয়া চৌধুরী মুন্নি, সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রদল সভাপতি রাজীব হাসানসহ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের নেতারা বক্তব্য রাখেন।