যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনের কয়েকটি অঞ্চলে প্রায় এক লাখ শিশু অনাহারে চরম অপুষ্টিতে ভুগে মরতে বসেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
মঙ্গলবার প্রকাশিত জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটির বাসিন্দারা বছরের পর বছর ধরে মারাত্মক খাদ্য সংকটে রয়েছে। ফলে সেখানকার বাসিন্দা বিশেষ করে শিশুরা চরম অপুষ্টিতে ভুগছে।
তার ওপর এ বছর অবস্থা এতটাই খারাপ হয়েছে, যা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।
এর কারণ হিসেবে প্রতিবেদনে করোনাভাইরাস মহামারীতে বৈশ্বিক অর্থনীতির সংকোচন, বন্যা এবং পুনরায় যুদ্ধ-সংঘাত বেড়ে যাওয়াকে দায়ী করা হয়েছে।
গত ছয় বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধ ইয়েমেনকে দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। এখনও আনুষ্ঠানিক ভাবে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করা না হলেও সেখানে বর্তমান পরিস্থিতি খুব নাজুক।
ইয়েমেনে জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয়ক লিসা গ্র্রান্ডে বলেন, ‘‘গত জুলাই থেকে আমরা বারবার ইয়েমেনের বিষয়ে সতর্ক করেছি। বলছি, মারাত্মক খাদ্য সংকটের কারণে দেশটি বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে।”
“এখনই এ যুদ্ধ শেষ না হলে আমরা ওই পরিস্থিতির খুব কাছে পৌঁছে গেছি যেখান থেকে ফেরত আসা আর কখনওই সম্ভব হবে না। ইয়েমেন শিশুদের পুরো একটি প্রজন্ম হারিয়ে ফেলার ঝুঁকিতে পড়ে গেছে।”
জাতিসংঘের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দক্ষিণ ইয়েমেনে পাঁচ বছরের কম বয়সের শিশুদের চরম অপুষ্টিতে ভোগার হার এ বছর ১০ শতাংশ বেড়ে গেছে। সংখ্যায় যা পাঁচ লাখের বেশি।
আর চরম অপুষ্টিতে ভুগে মৃত্যুমুখে চলে যাওয়া শিশুর সংখ্যা বেড়েছে ১৫.৫%, যা সংখ্যায় ৯৮ হাজার। প্রায় আড়াই লাখ গর্ভবতী ও প্রসূতি নারী এতটাই অপুষ্টিতে ভুগছে যে, তাদের চিকিৎসা প্রয়োজন।
দক্ষিণ ইয়েমেনে পাঁচ বছরের নিচে প্রায় ১৪ লাখ শিশু বাস করে। এই অঞ্চলটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ইয়েমেন সরকারের অধীনে আছে।
জাতিসংঘ ইয়েমেনকে বিশ্বের সবচেয়ে গুরুতর মানবিক সংকটে পড়া দেশ হিসেবে বর্ণনা করেছে। দেশটির ৮০ শতাংশ মানুষ ত্রাণের উপর নির্ভর করে বেঁচে আছে।
জাতিসংঘ আলোচনার মাধ্যমে ইয়েমেনে গৃহযুদ্ধ অবসানের চেষ্টা করছে। যে যুদ্ধ দেশটির এক লাখের বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে।
কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে বিশ্বের সব দেশেই অর্থনীতিতে সংকোচন দেখা দিয়েছে। ফলে জাতিসংঘের ত্রাণ তহবিলে ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
জাতিসংঘ জানায়, মধ্য অক্টোবর পর্যন্ত ইয়েমেনে ত্রাণ সহায়তার জন্য তাদের তহবিলে মাত্র ১৪৩ কোটি মার্কিন ডলার জমা পড়েছে। অথচ, তাদের প্রয়োজন ৩২০ কোটি মার্কিন ডলার।