পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তেহরিক-ই ইনসাফ পার্টির চেয়ারম্যান ইমরান খান অভিযোগ করেছেন তার দলের লংমার্চে নিজের ওপর বন্দুক হামলার জন্য তিন জন ব্যক্তি দায়ী। ওই তিন ব্যক্তি হলেন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ এবং সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল ফয়সাল। লংমার্চে চালানো সশস্ত্র ব্যক্তির গুলিবর্ষণে ইমরান খানের একটি পা গুলিবিদ্ধ হয় এবং পায়ের হাড় ভেঙে যায়।
যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলা বেড়ে গেছে কিন্তু ২০০৮ সালে পাকিস্তান পিপলস পার্টির সাবেক প্রধান বেনজির ভুট্টো সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হওয়ার পর আর কোনো রাজনৈতিক নেতা বা কর্মকর্তার ওপর হত্যাপ্রচেষ্টা চালানো হয়নি। ইমরান খানকে এমন সময় হত্যার ব্যর্থ চেষ্টা চালানো হয় যখন তিনি প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফের সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশ ও লংমার্চে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে হত্যা প্রচেষ্টার অভিযোগ উত্থাপন করা থেকে বোঝা যায় সেদেশের কোনো কোনো রাজনৈতিক গোষ্ঠী প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক নেতাদেরকে রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে চিরতরে সরিয়ে দিতে চায়। এ ধরণের আচরণ পাকিস্তানের রাজনীতিতে নজিরবিহীন।
পাকিস্তানের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ফুয়াদ চৌধুরি এ ব্যাপারে বলেছেন, তেহরিক-ই ইনসাফ পার্টি আগাম নির্বাচনের দাবি তোলায় ইমরান খান আবারো ক্ষমতায় আসতে পারেন বলে কোনো কোনো রাজনৈতিক দল উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। এ কারণে ইমরানের অগ্রযাত্রা থামিয়ে দিতে এবং তিনি যাতে আর কখনোই ক্ষমতায় আসতে না পারেন সেজন্য তাকে হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে।
অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হওয়ার পর পিপলস পার্টির প্রতি জনসমর্থন হু হু করে বেড়ে গিয়েছিল। ইমরান খানের ক্ষেত্রেও সেটা হতে পারে বলে অনেকের ধারণা। তবে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ আগাম নির্বাচনের জন্য ইমরান খানের দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন। এ থেকে বোঝা যায় আরো ব্যাপক জনসমর্থন ও ক্ষমতা নিয়ে ইমরান খান ফের ক্ষমতায় ফিরে আসতে পারেন বলে তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা আশঙ্কা করছেন। ফলে সেনাবাহিনীতেও তিনি প্রভাব বিস্তার করতে পারেন।
ইরানের রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক সুরুশ আমিরি এ ব্যাপারে বলেছেন, ‘পাকিস্তানের নিরাপত্তা ও সামরিক কর্মকর্তারা এজন্য চিন্তিত যে ইমরান খান কোনো আপোষ করেন না। তিনি যখন ক্ষমতায় ছিলেন তখনই এটা প্রমাণিত হয়েছে যে তিনি রাজনৈতিক ও সামরিক কর্তাব্যক্তিদের কোনো কথা না শুনে বরং সেদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে স্বাধীন নীতি গ্রহণের নীতিতে বিশ্বাসী’।
বাস্তবতা হচ্ছে, ইমরান খানের এ ধরণের স্বাধীন নীতি আমেরিকারও পছন্দ নয়। ইউক্রেন সংকট শুরুর পর ইমরান খান রাশিয়া সফরে গেলে আমেরিকা খুবই ক্ষুব্ধ হয়েছিল। এরপর থেকেই তাকে রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে সরিয়ে দেয়ার জল্পনাকল্পনা শুরু হয়। নি:সন্দেহে ইমরান খানকে হত্যাপ্রচেষ্টা পাকিস্তানের রাজনীতিতে ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। এ অবস্থায় হত্যা-প্রচেষ্টায় কারা জড়িত ছিল তা যদি তদন্তের মাধ্যমে বের করে আনা যায় তাহলে সেদেশে উত্তেজনা কমিয়ে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।