এখন হজ্ব ও ওমরা পরিণত হচ্ছে বিনোদন ও পর্যটনে। অনেকেই বছরের পর বছর হজ্ব ও ওমরা করছেন, তবে তাদের আমল-আখলাকে আসছে না তার কোন প্রভাব ও পরিবর্তন। আমাদের সমাজে সৃষ্টি হচ্ছে বিশেষ হাজী শ্রেণী, যারা হজ্ব ও ওমরার মাধ্যমে ধর্মীয় পরিচয় গ্রহণ করছেন, ধর্মীয় সম্মতি, স্বীকৃতি ও বৈধতা অর্জন করছেন, তবে আড়ালে সমর্থন ও অংশগ্রহণ করছেন দুর্নীতি ও অনৈতিক কাজকর্মে। এভাবে মানুষের কাছে হজ্ব ও ওমরা তার ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক প্রভাব হারাচ্ছে, পরিণত হচ্ছে নিছক ধর্মীয় বিনোদন ও পর্যটনে।
আজকাল হজ্ব ও ওমরার মানে ধনীলোকদের বিমানের প্রথম শ্রেণীতে বিলাসী ভ্রমণ, পাঁচ তারকা হোটেলে অবস্থান ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মীয় পর্যটনের ছবি আপলোড। মানুষের কাছে হজ্ব ও ওমরার ইবাদত, ইখলাস ও মুজাহাদার গুরুত্ব কমে যাচ্ছে। মধ্য ও নিম্নবিত্তদের হজ্ব ও ওমরা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠছে। অনেকে হজ্বের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণের চেষ্টা করছেন, তবে সামগ্রিক পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে প্রভাবিত হয়ে বিনোদন ও পর্যটনের ব্যতিক্রম কিছু করতে পারছেন না। এই লেখায় হজ্ব ও ওমরার এই ঐতিহাসিক রুপান্তর নিয়ে কিছু কথা বলতে চাই।
হজ্বের ধর্মীয় মর্ম
হজ্ব ইসলামের পাঁচ রুকনের একটি। ইসলামকে যদি তাবুর সাথে তুলনা দেওয়া হয়, তাহলে হজ্ব সেই তাবুর একটা গুরুত্বপূর্ণ খুঁটি। হাদিসে বর্ণিত নবিজির এই দৃষ্টান্তে ইসলামে হজ্বের বিশেষ গুরুত্বের কথা বুঝা যায়। এই পাঁচ রুকনের মধ্যে ঈমান বিশ্বাসের সাথে সম্পর্কিত, নামাজ ও রোজা শারীরিক ইবাদত, যাকাত আর্থিক— হজ্ব আর্থিক ও শারীরিক ইবাদতের সমন্বয়, হজ্বে অর্থ ও শারীরিক শ্রম উভয়টিই ব্যয় করতে হয়। হজ্বে মিল্লাতে ইবরাহিম, ইসলামের জন্মস্থান ও ঐতিহাসিক সংগ্রামের সাথে পরিচিতি ঘটে।
সামর্থ্যবান প্রত্যেক মুসলিমের জীবনে অন্তত একবার হজ্ব করা জরুরী। আল্লাহ তাআলা বলেন, যাদের সক্ষমতা আছে, তাদের আল্লাহর জন্য হজ্ব করতে হবে (৯৭, আলে ইমরান)। নবিজি বলেন, যে ব্যক্তি অশ্লীলতা ও গুনাহের কাজে সম্পৃক্ত হওয়া ছাড়া হজ্ব পালন করে, সে নবজাতক শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে ফিরে আসে ( বুখারি)। এই দুই আয়াত ও হাদিস থেকে হজ্বের গুরুত্ব ও প্রভাব বুঝা যাচ্ছে। ইসলামি ইতিহাসে যুগে যুগে এমন গুরুত্বের সাথেই হজ্ব পালিত হয়েছে। গত পঞ্চাশের দশক পর্যন্ত আমরা এর ধারাবাহিকতা বজায় থাকতে দেখি।
পঞ্চাশের দশক পর্যন্ত হজ্ব ও ওমরায় ছিল ধনী-গরীব সবাই সমান। বিদেশী অংশগ্রহণকারীর সংখ্যাও ছিল সীমিত, সর্বসাকুল্যে লাখ খানেক বিদেশী হজ্বে অংশগ্রহণ করতো। ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ সহজ হয়ে উঠে, সৌদি প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় অংশগ্রহণের পরিধি ও পরিসর বৃদ্ধি করা হয়, যার প্রক্রিয়ায় মক্কায় এখন প্রায় ত্রিশ লক্ষ হাজীর অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি হয়েছে। সাথেসাথে যুক্ত হয়েছে বাজার অর্থনীতি ও লাভলোকসানের হিসাব। বিনোদন ও পর্যটনের সুযোগ বেড়েছে, ইখলাস ও মুজাহাদার প্রভাব কমেছে।
বাজার অর্থনীতি ও হজ্বের ঐতিহাসিক রুপান্তর
বাজার অর্থনীতির মানে লাভের দৃষ্টিকোণ থেকে চাহিদা ও যোগানের ভিত্তিতে অর্থনৈতিক লেনদেন সম্পন্ন করা। যেহেতু এখানে লাভের দৃষ্টিকোণ প্রবল থাকে, পাশাপাশি চাহিদা ও যোগানের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, তাই অনেক ক্ষেত্রে মূল্যবোধ লঙ্ঘিত হয়। তাই অর্থনীতিবিদদের মতেও সর্বক্ষেত্রে বাজার অর্থনীতি ভালো ফল বয়ে আনে না, বিকৃতি ও বিশৃঙ্খলাও তৈরি করে। হজ্ব ও ওমরার ক্ষেত্রেও লাভের দৃষ্টিকোণ ইবাদতের ইখলাস ও মাকসাদে বিকৃতি ঘটাচ্ছে। হজ্বের মধ্যে বিনোদন ও পর্যটনের আবহ তৈরি করছে।
পৃথিবীতে মুসলমানদের সংখ্যা অনেক, পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় পঁচিশ শতাংশই মুসলমান, তাই মুসলমানদের ধর্মীয় কোন গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানকে বাজার অর্থনীতির আওতায় আনা গেলে বিপুল পরিমাণ লাভের সম্ভাবনা তৈরি হয়। ইসলামের মূল পাঁচ রুকনের মধ্যে একমাত্র হজ্বকেই বাজার অর্থনীতিতে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব। কেননা একে পর্যটন ও বিনোদন বানানোর চেষ্টা করা যেতে পারে; এখানে বিমান, হোটেল, খাবার ও মার্কেটিং এর মতো অনেক অনুষঙ্গ আছে। এভাবে বাজার অর্থনীতি হজ্ব ও ওমরার ঐতিহাসিক রুপান্তরের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এখানে বলে রাখা ভালো, হাজীদের সুবিধার জন্য সেবার ব্যবস্থা করা, সেই প্রয়োজনে ব্যবসা করা মোটেই খারাপ কিছু নয়। এতে ইসলামের কোন বাঁধা নেই। তবে বাজার অর্থনীতির সাথে সম্পৃক্ত হলে সেখানে সুবিধার পাশাপাশি হজ্বের মূল মর্ম পরিবর্তনের আশঙ্কা তৈরি হয়। তৈরি হয় ধনী-গরীবে বৈষম্য। পাঁচ তারকা হোটেলে বসে হজ্ব সম্পন্ন করা হয়। হজ্বের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের কোন বালাই থাকে না, স্বৈরাচারী শাসক ও পুঁজিবাদী ব্যবসায়ীরা বিশেষ মর্যাদা ও গুরুত্ব পায়। ইসলামের মূলকেন্দ্রেও বিশেষ সমাদর পান না আলেম-ওলামা-ইসলামপন্থী নেতারা। কেননা বাজার অর্থনীতিতে তাদের বিশেষ অংশগ্রহণ নেই।
হজ্ব ও ওমরা ব্যবসা
এই রুপান্তরের সুযোগগ্রহীতা শুধু সৌদি সরকার-অর্থনীতি ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোই নয়, তার পাশাপাশি বিদেশী হাজীদের পক্ষ থেকে অনেক ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় বাজার অর্থনীতির এজেন্ট হিসেবে কাজ করেন। একে তারা ব্যবসা হিসেবেই দেখেন— আগেই যেমন বলেছি, সেবা প্রদানের বিনিময় গ্রহণ করতে কোন লজ্জা বা অসুবিধা নেই। তবে ধর্মীয় ব্যক্তিত্বরা যেহেতু নিছক এজেন্ট হিসেবে কাজ করেন, তাই তাদের পক্ষে হজ্বের বর্তমান সংস্কৃতি পরিবর্তনে বিশেষ ভূমিকা রাখা সম্ভব হয় না।
আগে মানুষ আলেমদের কাফেলাভুক্ত হয়ে হজ্বের সফরে যেতেন, ইবাদত-মুজাহাদার পাশাপাশি আমল-আখলাক-ইখলাসের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতেন। এখন হজ্বের কার্যক্রম অনেকাংশে দেশীয় ব্যবসায়ীদের হাতে চলে গেছে। এখানে ধর্মীয় অনুষঙ্গের চাইতে পরিবহণ, হোটেল ও পানাহারের মতো বিষয়গুলোই বিশেষ গুরুত্ব পায়। যার প্রক্রিয়ায় দেশীয় এজেন্টদের মাধ্যমেও অনেক কুসংস্কার ও দুর্নীতি ঢুকে গেছে হজ্ব-ওমরার সামগ্রিক কার্যক্রমে। হজ্বকে অন্য দশটি পর্যটন খাতের থেকে আলাদা করা আসলেই কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
অবশ্য শুধু স্থানীয় ব্যবসায়ীরাই নয়, সেকুলার সরকার, প্রতিষ্ঠান ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোও হজ্বের অর্থনীতি থেকে লাভবান হচ্ছে। শুধু হজ্ব এজেন্সির লাইসেন্সকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে প্রায় পঞ্চাশ কোটি টাকার অবৈধ লেনদেন থাকার অভিযোগ তৈরি হয়েছে। হজ এজেন্সিস অব বাংলাদেশ (হাব) এর তথ্য মতে হজ্বকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর বাংলাদেশে প্রায় সাত হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়। এ পেশার সাথে প্রায় এক লাখের মতো মানুষ জড়িত আছেন। হজ্ব ও ওমরাকে বাংলাদেশ বিমানের অন্যতম প্রধান রাজস্ব আদায়ের মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মোটকথা হজ্ব ও ওমরাকে কেন্দ্র করে এখন বিশাল আর্থিক লেনদেন গড়ে উঠেছে, যা অনেকাংশে বাজার অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণেই পরিচালিত হয়।
হজ্ব ও ওমরায় প্রদর্শনকামিতা
বর্তমানে হজ্ব ও ওমরায় অংশগ্রহণকারীরা অনেকাংশে প্রচার ও প্রদর্শনকামিতায় শরীক হয়ে গেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের যুগে ইহরাম, তাওয়াফ, সাঈ ও উকুফের মতো ইবাদতগুলোর ছবি ফেসবুক-টুইটার- ইন্সট্রাগ্রামের শেয়ার করছেন অনেকে। হজ্বের মৌসুমে এমন প্রচারকামিতা বিনোদন ও পর্যটনের বিশেষ অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে। যেখানে ইবাদতের মূল ভিত্তি ও বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ইখলাস, হজ্বের মাধ্যমে তাকওয়া ও মুজাহাদার শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে বলা হয়েছে, সেখানে সেই ইবাদতকেই বানানো হচ্ছে প্রদর্শনকামিতার মাধ্যম।
দুই হাজার উনিশে আমি ওমরা পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরবে গিয়েছিলাম। আমার মনে আছে মসজিদে কুবায় মানুষকে এমনভাবে ছবি তোলার চেষ্টায় ব্যস্ত থাকতে দেখেছি যে, তাতে মনে হয়েছে মসজিদে কুবা সম্ভবত কোন জাদুঘর বা ঐতিহাসিক স্থাপত্য। নামাজিদের সামনে-পেছনে মানুষ ছবি তুলছিল। নামাজিদের চেয়ে ছবি সংগ্রহকারীদের সংখ্যা মোটেই কম ছিল না। এতে মসজিদের মর্যাদা, ভাবগাম্ভীর্য ও গুরুত্ব বিনষ্ট হচ্ছিল। তবে এই প্রদর্শনকামিতার মূল বীজ তো লুকিয়ে আছে বাজার অর্থনীতির সংশ্লিষ্টতাতেই। বাজার তো শিক্ষা ও মর্যাদা বুঝে না। তার মূল লক্ষ লাভ বাগিয়ে নেওয়া। চাহিদা ও যোগানের বাইরে তার কোন নীতি বা ধর্ম নেই।
মক্কার সাংস্কৃতিক রুপান্তর
এতে কোন সন্দেহ নেই যে, সৌদি হাজীদের সেবার মান বাড়িয়েছে ও তাদের কষ্ট লাঘবের চেষ্টা চালিয়েছে। তবে এর জন্য বাজার অর্থনীতির আশ্রয় নেবার কোন প্রয়োজন ছিল না। বাজার অর্থনীতির আশ্রয় গ্রহণের ফলে হজ্ব ও ওমরায় বৈষম্য বেড়েছে ও মূল্যবোধ বিনষ্ট হয়েছে, এর পাশাপাশি মক্কা ও মদীনার অনেক ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক স্থাপনাও ধ্বংস করা হয়েছে। গত দুই-তিন দশকে মক্কার প্রায় নব্বই শতাংশ ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক স্থাপত্য মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাতে বাইতুল্লাহর সাথে বিচ্ছেদ ঘটে গেছে ইসলামি ইতিহাসের ; এখন মক্কার রাস্তায় হাঁটলে ইসলামের প্রাথমিক যুগের স্মৃতি ও স্থাপত্যের চাইতে বহুজাতিক কোম্পানির বিজ্ঞাপন ও পসরাই বেশী চোখে পড়ে।
খাদিজা রাদি. এর বাড়ির স্থানে নির্মিত হয়েছে চৌদ্দশো অজুখানা ও শৌচাগার। আবু বকর রাদি. এর বাড়ির স্থানে গড়ে উঠেছে মার্কিন কোম্পানি হিল্টনের বহুতল হোটেল। উসমানী দুর্গ আজইয়াদের স্থানে গড়ে উঠেছে জমজম টাওয়ার। নবীজির জন্মস্থানকে পরিণত করা হয়েছিল বাজারে। শেষপর্যন্ত প্রতিবাদের মুখে তাকে লাইব্রেরীতে রুপান্তরিত করা হয়। তবে সেখানে যে কেউ প্রবেশ করতে পারে না। পাশাপাশি বাইতুল্লাহর আশেপাশে অপ্রয়োজনীয়ভাবে ঐতিহাসিক স্থাপত্যগুলো ধ্বংস করা হয়েছে। মক্কায় গেলে আপনার মনে হবে আপনি কোন পর্যটন শহরে চলে এসেছেন। বাসস্থান ও পানাহারের খরচ অনেক বেশী। আশেপাশে স্থাপত্যে রুহানিয়াতের চাইতে বাজার সংস্কৃতির চিহ্নই বেশী পাবেন।
মক্কায় আপনি চাইলেও হোটেল কেনা বা ব্যবসা করার কোন সুযোগ নেই। মালিকানা একচেটিয়াভাবে সৌদিদের হাতে, তারা আবার হোটেল বা ব্যবসা বিদেশী কারো হাতে ছেড়ে রাখেন, এভাবে একাধিক মালিকানা থাকায় একদিকে যেমন প্রতিযোগিতা কমে আসছে, আবার অন্যদিকে শ্রম ও ব্যবসা ছাড়াই সৌদির অনেকে মুফতে টাকা কামাই করছেন। তাতে হজ্বের অর্থনীতিতে এর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। সৌদির নাগরিকদের বাইরের কেউ সাধারণত মক্কা বা মদিনায় ইমাম হতে পারেন না। আবার পশ্চিমা দেশগুলোর মতো সৌদিতে কেউ চাইলেই নাগরিক হতে পারেন না। অর্থাৎ সব দরজা বন্ধ।
এভাবে বাজার সংস্কৃতির পাশাপাশি সৌদি জাতীয়তাবাদের বিস্তারে হজ্ব ওমরার মতো বিশেষ ইবাদত কলুষিত হচ্ছে। মক্কা-মদীনা তার ঐতিহাসিক মর্যাদা হারাচ্ছে। পৃথিবীর পঁচিশ ভাগ মানুষের ধর্মীয় ইবাদতের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে সৌদি একাই। হজ্বের অর্থনীতির ফলও ভোগ করছে অনেকাংশে তারাই। সৌদি যদি সেই পঁচিশ শতাংশ মানুষের দায়-দায়িত্ব-কর্তব্য বহন করতো, তাহলে এটা নিয়ে কখনোই প্রশ্ন উঠত না। তবে সৌদি জাতীয়তাবাদের বিস্তারে হজ্ব-মক্কা-মদিনার দায়িত্বের প্রশ্নে অভিযোগ বাড়ছে।
শেষকথা
সৌদি প্রশাসনের অনেক সমালোচনা করা হলেও তাদের শ্রম ও সেবাকে একদম গুরুত্বহীন ভাবা যাবে না। সৌদির সাধারণ নাগরিক ও ধনী ব্যক্তিরা যেভাবে দান-সাদকা করে, হাজীদের সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করার চেষ্টা করে, তাকে অস্বীকারের কোন সুযোগ নেই। তবে সেসব পরিশ্রম ও আন্তরিকতাকে ছাপিয়েও প্রশ্নগুলো উঠছে। এর একটা বড় কারণ, বাজার অর্থনীতি ও সৌদি জাতীয়তাবাদে হজ্ব পরিণত হচ্ছে পর্যটন ও বিনোদনে। এর সমাধান আছে ইসলামের কাছেই। ইসলামের প্রকৃত আদর্শ বাস্তবায়ন করলে সব সমস্যা থেকে মুক্তি ঘটবে।
আপনি হজ্ব বা ওমরা করতে গেলে বাইতুল্লাহ থেকে বের হতেই দেখবেন, বহুজাতিক কোম্পানির বিজ্ঞাপন। পাশেই কেএফসি ও ভোগ্যপণ্যের দোকান। চারদিকে বিলাসিতার হাতছানি। কেমন যেন বাইতুল্লাহর সাথে বাকি মক্কার সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। আমরা হজ্ব ও ওমরায়, মক্কা ও মদীনায় যাই রুহানিয়াতের খোঁজে। সেখানেও যদি মসজিদের লাগোয়া মার্কেটে কেএফসি ও আইফোনের বিজ্ঞাপন দেখি, তখন আমরা বিনোদন ও পর্যটনে প্ররোচিত হই। আমরা ধীরে ধীরে দূরে সরে যাই হজ্বের ইবাদত, ইখলাস ও মুজাহাদা থেকে।