আমেরিকার রাজনীতিতে “সাদা শ্রেষ্ঠত্ববাদের” উত্থান এক স্থায়ী ক্ষত, যদিও তা আপাতত ট্রাম্পের বাধাকে পরাজিত করে বাইডেনের শপথের মধ্য দিয়ে ঢেকে লুকিয়ে ফেলা গেল। তবে এটাই এখন আমেরিকার রাজনীতিতে মুখ্য ইস্যু হতে থাকবে। আমেরিকান সমাজের অভ্যন্তরের এই দগদগে ক্ষত যেটা ট্রাম্পের হাত ধরে চারবছর আগে একটু একটু করে বাইরে আসছিল সেটাই এখন উদাম হয়ে পড়েছে। এই ক্ষতের নাম “সাদা শ্রেষ্ঠত্ববাদিতা”। সাদা চামড়ার লোকেরাই দুনিয়াতে শ্রেষ্ঠ রেসিয়াল মানুষ। তাই বাকি সব রেসের [race] মানুষকে তাঁদের অধীনে আসতে ও চলতে হবে, শাসিত হতে হবে।
আমেরিকা চলবে সাদা আধিপত্যে, অন্যদের বের করে দেওয়াও হতে পারে। ইত্যাদি এসবই হল, রেসিয়াল (বা জাত) শ্রেষ্ঠত্ববাদীদের কমন বয়ান। হিটলার মনে করতে নীল চোখের জর্মান আরিয়ান জাতি ইউরোপে শ্রেষ্ঠ। তাই ইহুদি-সহ সব রেসের মানুষকে তাঁদের পদানত করতে হবে। মোদী ও তাঁর সঙ্গী ও দল মনে করে দক্ষিণ এশিয়ায় হিন্দুরাই শ্রেষ্ঠ। তাই বাকিরা সবাই ‘নিচা জাত” বা রেসের মানুষ। তাই বাকি সকলকে তাঁদের অধীনে যেতে হবে। এগুলো জাত শ্রেষ্ঠত্ববাদের কমন বয়ান।
সবখানেই দেখা যাবে “শ্রেষ্ঠত্ববাদের” ধারণা। এই শ্রেষ্ঠত্ববাদের সাদা চামড়ার ভার্সান হোয়াইট সুপ্রীমিস্ট – এই নামে সেটা যে গত চারবছর ধরে রিপাবলিকান পার্টিটাকেই অনেকটা খেয়ে ফেলেছে সেটাই আমেরিকা তো বটেই সারা দুনিয়াও এখন জানল। মূলত জাতিবাদী এই “সাদা শ্রেষ্ঠত্ববাদীরা” চিন্তা হিসাবে খুবই ডেসপারেট, বিধ্বংসী। আমেরিকার এই জাত শ্রেষ্ঠত্ববাদীরা -সহ সব জাতবাদীরা সেটা মোদী-ভগত এদের আরএসএস হিন্দুত্ববাদ কিংবা স্বয়ং নাৎসি-স্বস্তিকার হিটলার ইত্যাদি সকলেই কোন হেদায়েতি (পারসুয়েসিভ) ধারা নয় একেবারে কেবল কঠোর বলপ্রয়োগেই বিশ্বাসী হয়ে থাকে। তারা অন্যকে নিজেদের মতাদর্শ বুঝায়ে বলতেও আগ্রহি নয়। বরং মনে করে কেবল বলপ্রয়োগে তা আপনাকে মানতে বাধ্য করানো সহজ, এমন ভাবনার পক্ষের লোক। অবশ্য জাতিবাদী মাত্রই কম-বেশি তাদেরকে মেনে নিতে বলপ্রয়োগে বাধ্য করার পক্ষের লোকই হয়ে থাকে।
কিন্তু তাতে এবার সাদা শ্রেষ্ঠত্ববাদীতা কী এতদিনের আমেরিকান রাজনীতির রিপাবলিকান ও-ডেমোক্রাট এদুই ধারাকে তিন ধারায় রূপান্তরিত করে দিবে? অথবা আগের দুই ধারাই থাকবে কিন্তু রিপাবলিকান ধারাটা মূলত সাদা শ্রেষ্ঠত্ববাদী ধারা হয়ে যাবে (!) – এটা এতদিন কেউ কল্পনাও করে নাই। আমেরিকান-রাষ্ট্র এতদিন নিজেকে খুবই [stable] স্থায়ী রাষ্ট্র বলে গর্ব করত; সম্ভবত সেদিন ফুরাচ্ছে।
এখন সামগ্রিক বিবেচনার জায়গা থেকে দেখলে, গ্লোবাল নেতৃত্বের স্থানে আমেরিকার জায়গায় চীনের উত্থানের ধাক্কায় দেখা যাচ্ছে তা সামলাতে না পেরে প্রতিক্রিয়ায় আমেরিকার আভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক জগত এমন তছনছ হয়ে যাবে তা আগে ভাবা যায় নাই। যদিও ইউরোপের নয়া নাৎসি ধরণের ছোট ছোট পকেট-অস্তিত্ব গোপন/বেনামে অনেকদিন থেকেই আছে। আর এরই মতন আমেরিকান সমাজেও হোয়াইট সুপ্রীমিস্ট নামে ছোট ছোট পকেটও অনেক দিন থেকেই আছে। তবে যেটা আগে হয়ত তত গোণায় ধরার মত ছিল না। আবার অর্থনীতি ভাল চলার সাথে “মাইগ্রেশন” বা সস্তা বিদেশি-লেবার আমদানি হতে দেয়া আমেরিকান সমাজে বেড়ে যাওয়ারই কথা। আবার খারাপের সময় মাইগ্রেশনকে বিরাট বোঝা মনে করা – এভাবে মাইগ্রেশন ইস্যুটাই অর্থনীতির ভাল-মন্দের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত। আর এই মাইগ্রেশন বাড়া-কমার সাথে আমেরিকায় সাদা শ্রেষ্ঠত্ববাদিতার প্রভাব বাড়া-কমা সরাসরি সম্পর্কিত। কারণ অর্থনীতি খারাপ চলা মানেই মাইগ্রেটেড শ্রমিককে বোঝা মনে করা লোকের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া; আর এটাই সাদা শ্রেষ্ঠত্ববাদিতার আইডিয়াকে পপুলার করার ভাল সময় হয়ে উঠে। সেই হিসাবে আমেরিকা গ্লোবাল নেতৃত্ব বা প্রথম স্থান হারিয়ে দ্বিতীয় হয়ে যাওয়ার আলামত দেখা দেওয়াতে এতে আমেরিকান সমাজে এমন একটা ধাক্কা বা বড় নড়াচাড়া আসা অস্বাভাবিক নয় অবশ্যই।
কিন্তু তাতে এবার সাদা শ্রেষ্ঠত্ববাদীতা কী এতদিনের আমেরিকান রাজনীতির রিপাবলিকান ও-ডেমোক্রাট এদুই ধারাকে তিন ধারায় রূপান্তরিত করে দিবে? অথবা আগের দুই ধারাই থাকবে কিন্তু রিপাবলিকান ধারাটা মূলত সাদা শ্রেষ্ঠত্ববাদী ধারা হয়ে যাবে (!) – এটা এতদিন কেউ কল্পনাও করে নাই। আমেরিকান-রাষ্ট্র এতদিন নিজেকে খুবই [stable] স্থায়ী রাষ্ট্র বলে গর্ব করত; সম্ভবত সেদিন ফুরাচ্ছে। এখন সেটা তিন ধারায় পরিণত হোক অথবা দুই ধারাই কিন্তু ‘রিপাবলিকান ধারাটা বলতে মূলত সাদা শ্রেষ্ঠত্ববাদী ধারা হয়ে যায় যদি তবে বুঝতে হবে এটা হলে আমেরিকার চীনের কাছে হেরে আর দ্বিতীয় অর্থনৈতিক শক্তিও থাকতে পারাটাও ক্রমশ অনিশ্চিত হওয়ার পথে যাচ্ছে। অন্যভাবে সার করে বললে, আমেরিকা-রাষ্ট্রের আভ্যন্তরীণ গঠন এতে ভিতর থেকে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। আর এই ফাঁকে আমেরিকাকে দ্বিতীয় অবস্থান ধরে রাখতে গিয়ে হিমশিম অবস্থায় পড়ে বা অন্যেরা না তাকে তৃতীয় অবস্থানে ঠেলে ফেলে দেয়, এই অবস্থা তৈরি হবে। যাতে এই লড়াইয়ে ভারতের বদলে ইউরোপ (ইইউ) হয়ে উঠতে পারে চীনের সবচেয়ে ঘনিষ্ট হিসাবে দ্বিতীয় শক্তি, আর তারও নিচে চলে যেতে পারে আমেরিকা। এককথায় আমেরিকায় সাদা শ্রেষ্ঠত্ববাদী ধারা উত্থান ও জেঁকে বসার সোজা মানে হবে আমেরিকার গ্লোবাল অবস্থানকে আরও দুস্থ অসহায় করে পিছিয়ে দেয়া।
তবে আমেরিকার এমন দুর্দশা ও পতন কত নিচে যাবে তা এই মুহুর্তেই প্রায় পুরাটাই উন্মোচিত হতে হতে গিয়েও শেষে ঠেকে গেল। মূল কারণ, ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় ট্রাম্পের ইমপিচমেন্ট আর হল না। যদিও এখনও তা হতে পারে, শপথের পরে দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে আবার এর সম্ভাবনা বাড়বে। সেক্ষেত্রে সেটা হবে কোন “সাবেক” প্রেসিডেন্টের ইমপিচমেন্টের প্রথম উদাহরণ। সেই হবু সিনেট ইমপিচমেন্ট শেষে পর্যন্ত আর হোক আর নাই হোক, আমেরিকান-রাষ্ট্র স্থায়ীভাবে দুর্বল হয়ে পড়া এবং আমেরিকান রাষ্ট্র-রাজনীতিতে কালোদাগ ছাপ লেগে যাওয়াটা ঘটেই গেছে। এটাই আর আমেরিকান রাষ্ট্র আগের মত কমপিটিটিভ থাকবে না। মানে, অন্যান্য রাষ্ট্রের পাশাপাশি সবল থাকার ক্ষমতাটা এখন হারাবেই। কেবল এর মাত্রা কেমন হবে সেটা নির্ণিত হতেই কেবল বাকি আছে।
সাদা শ্রেষ্ঠত্ববাদী রাজনীতি আমেরিকান রাজনৈতিক পাড়ায় কত বড় জায়গা নিবে, দখল ও প্রভাব নিয়ে হাজির হবে এর প্রথম রাউন্ড আমরা দেখে ফেলেছি গত ৬ জানুয়ারি – সাদাবাদিদের আমেরিকার সংসদের রানিং যৌথ অধিবেশনের উপর শরীরি দখল নেয়া – তান্ডব ও নিজেদের আধিপত্য সেদিন কতটা প্রতিষ্ঠা করেছিল তা দেখে। যেমন সেদিনের মোট গ্রেফতারের সংখ্যাটা ছিল মাত্র ৮৩ জন। যার মধ্যে আবার প্রায় অর্ধেক ছিল তাঁদের বাড়ি ফেরার সময় ততক্ষণে (সন্ধ্যার পর থেকে কার্ফু জারি হয়েছিল) সে কার্ফুভঙ্গের অভিযোগে পড়ে গেছে তাই। দিনের বেলায় সংসদে দাঙ্গা-হাঙ্গামা ঘটানোর জন্য গ্রেফতার হয়নি তারা। অর্থাৎ পুলিশ উদার থেকেছিল এর প্রমাণ এটা। আর কার্ফুভঙ্গ যা তুলনায় খুবই লঘু অপরাধ। এর সোজা মানে হল, সংসদের ভিতরের হাজার হাজার তান্ডবরত সাদাবাদি-দেরকে পিঠে হাতবুলিয়েই বাসায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আর, ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় যদি ইমপিচ করে শেষে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হত সেক্ষেত্রে সাদাবাদিরা দ্বিতীয়বার তাঁদের ক্ষমতা প্রদর্শন করতে রাস্তায় নামতে প্রস্তুত ছিল। আর তাহলেই সাদা শ্রেষ্ঠত্ববাদীরা কতটা রাজনৈতিক প্রভাব সঞ্চয় করেছে আর রিপাবলিকান দলের মধ্যেইবা কতটা প্রধান ধারা ইতোমধ্যেই হয়ে গেছে এরই প্রদর্শনী আর লুকানো থাকত না।
এর তাহলে সোজা অর্থ হল, আমেরিকান সমাজে রিপাবলিকান ধারাটা মূলত কতটা সাদা শ্রেষ্ঠত্ববাদী ধারা হয়ে গেছেই কেবল সেটা দেখানোটাই আড়ালে রয়ে গেছে। বাইডেন এই ক্ষতটাই লুকিয়ে চলার সুযোগ নিচ্ছে। তাসত্বেও মনে হচ্ছে আগামি ছয়মাসের মধ্যেই সাদা শ্রেষ্ঠত্ববাদী ধারাটাই মুখ্য বিরোধী-ধারা হয়ে জানান দিতে চেষ্টা করবে। এতে এরা যতটা সফল হবে বাইডেনের আমেরিকা ততই চীনের সাথে বাণিজ্য সম্পর্ক নিগোশিয়েশন দ্রুত গুটাতে তাড়াহুড়া শুরু করা সম্ভাবনা বাড়বে। যা হবে অনেকটা সত্যিকার হারার আগেই বাইডেনের হেরে যাওয়া। তা আগামিতে আরও কী পরিণতি হয় দেখতে একটু অপেক্ষা করতে হবে আমাদের। তবে সব কিছুরই ভিত নড়ে গেছে, আগের মত আর কিছুই নাই।
আপাতত শেষটা ভাল দিয়ে শেষঃ
তবু আমাদের বলতেই হবে আমাদের সামাজিক প্রবাদ যেমন বলে, ‘শেষটা ভালোভাবে হলেই সবটা ভালোই হয়েছে’। হোয়াইট সুপ্রিমিসিস্ট রিপাবলিকান; আর এদের হুমকিতে আমেরিকার দীর্ঘ প্রায় আড়াই শ’ বছরের রাজনৈতিক সিস্টেমে ক্ষমতা হস্তান্তর ব্যবস্থাটা প্রথমবারের মত হুমকিতে পড়ে ভণ্ডুল হয়ে যেতে লেগেছিল। শেষে অন্তত, যা কিছু হয়েছিল, খচখচে কাঁটাসহ সব কিছু পেছনে ফেলে বাইডেনের আমেরিকা তা আপাতত মাটিচাপা দিতে পেরেছে। বাইডেনের শপথ অনুষ্ঠান ন্যূনতম কোনো অঘটন ছাড়াই শেষ হতে পেরেছে। যদিও শপথ শেষের বক্তৃতায় বাইডেন, তিনি আমেরিকায় প্রধান শত্রু হিসাবে “সাদা শ্রেষ্ঠত্ববাদীদের” নাম উল্লেখ করতেই হয়েছে। স্বীকৃতি বাইডেনকে দিতেই হয়েছে।
কাজেই অন্তত মিডিয়া জগতে এখন আমরা, গ্লোবাল পারস্পেকটিভে বিজনেস আগের মতই আর তা ব্যবহারিক যার যার স্বার্থের দিক থেকে সামনের দুনিয়া কেমন হতে যাচ্ছে, সম্ভাবনা কী কী তৈরি হচ্ছে সেসব দিকে মনোযোগ ফিরাতে পারি। বাংলাদেশের দিক থেকে, আমাদের তিনটি স্তরে তিন দিক থেকে আগামী চার বছরের দুনিয়ায় যখন বাইডেন প্রেসিডেন্ট থাকবেন তখন তা দেখতে কেমন হবে এর ছবিটা জানার ব্যাপারে আমাদের জনগোষ্ঠিগত নিজস্ব স্বার্থ ও আগ্রহ মেলে ধরতে পারি। এর প্রথম স্তরটা হল, গ্লোবাল যা মুখ্যত চীন-আমেরিকার সম্পর্ক কোথায় কোন পয়েন্টে গিয়ে শেষে থিতু হচ্ছে এবং কেন এমন হবে সেটা জানাবুঝার চেষ্টা করা। এটা আমাদের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ এজন্য যে, এই প্রভাব বাইরের হলেও তা আমাদের উপরও পড়বে ও বড় প্রভাব রাখবে। আর দ্বিতীয় স্তরটা হলো জোনাল। অর্থাৎ এশিয়ার নাট্যশালায় যা আমাদের ডানে-বামে চীন ও ভারতের স্ব স্ব স্বার্থাবস্থানের দিকে আমাদেরকে নিয়ে যেতে টানাটানির হবে, সাথে বাইডেন প্রশাসনের যোগ হওয়া প্রভাব তো থাকবেই। আর তা আমাদের জন্য যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ এজন্য যে, চীন হতে যাচ্ছে ‘নতুন নেতা’। এ ছাড়া তৃতীয় স্তরেরটা হল, সরাসরি বাংলাদেশ-আমেরিকা সম্পর্ক।
যদিও এই তৃতীয় স্তরেরটা এবার আমাদের কল্পনারও বাইরে চলে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা। এর মূল কারণ চলতি শতকের শুরু থেকেই ২০ বছর ধরে আমেরিকা দক্ষিণ এশিয়ায় বিশেষত বাংলাদেশে এসেছিল ভারতকে ভর করে সাথে নিয়ে আমেরিকার চীন ঠেকানোর কাজে ভারতকে ‘ঠিকা দিতে’। আগামি এবার বিরাট ফারাকটা হবে এখানেই। কী সেটা?
আগের আমেরিকার আচরণ ও তৎপরতা দেখে যদিও আমরা প্রায় ভুলতে বসেছিলাম, দক্ষিণ এশিয়ায় চীন ঠেকানোটাই আমেরিকার একমাত্র স্বার্থ নয়। কিন্তু বেকায়দায় অবস্থাতে পড়ে আমেরিকা এসেছিল যেন চীন ঠেকানো ছাড়া তার আর কোনো স্বার্থ নেই, এমন ভাব ধরে। আমেরিকার অন্য মুখ্য স্বার্থ যা তখনো ছিল এবং এখনো আছে – তা হল বঙ্গোপসাগরে সেভেনথ ফ্লিটকে যদি নোঙর করাতে পারে। কিন্তু তার মনের কথাটা এতদিন মনেই রয়ে যায়, কারণ এ বিষয়ে ভারত একদম ঘোরতর বিরোধী, নুন্যতম ছাড় দেওয়ার পক্ষপাতি নয়। যদিও চীনের অসহনীয় চাপের মুখে পড়লে আন্দামানে আমেরিকাকে ঘাঁটি গাড়তে দিতে পারে, এমন চিন্তা বাড়ছে, যা একালের নতুন ঘটনা।
তবে এতদিন আমেরিকা এই স্বার্থ লুকিয়ে রেখেছিল, যাতে চীন ঠেকানোর ঠিকাগ্রহিতা ভারতের সার্ভিসটা সে পেতে পারে। কিন্তু আজ এটা সবপক্ষের কাছেই পরিষ্কার, আমেরিকার এই চীন ঠেকানো পলিসি অকেজো, কোন কাজে আসেনি, ডিভিডেন্ট, লাভ-মুনাফা দেয়নি। আমেরিকার সব স্বার্থ পানিতে গেছে। চীনের অবজেকটিভ বা বৈষয়িক-অর্থনৈতিক শক্তি হয়ে উত্থান সামরিক উত্থান নয় যে, তাই এটা ঠেকানো অসম্ভব রয়েই গেছে। ফলে ভারতের ‘মুই কী হনু রে’- এই মিথ্যা ঘাড় ফোলানো দেখা ছাড়া আমেরিকার এতদিনের পলিসি আমেরিকাকে কিছুই দেয় নাই, কোন কাজে লাগেনি। অতএব এবার বাইডেনের আমেরিকার পুনঃরূত্থানের চেষ্টা এই নবউদ্যোগে এশিয়ায় আমেরিকার আগমন যদি ঘটে তা হওয়ার অনেক বেশি সম্ভাবনা থাকবে একান্ত আমেরিকান নিজ স্বার্থ ডমিনেটিং রেখে নিজেকে হাজির করাতে। মানে, এবার আমেরিকা ততটাই ভারতবিরোধী না হলেও কোন রকম গাটছাড়া না বেঁধে আসারই সম্ভাবনা।
এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বাইডেনের আমেরিকার সাথে চীনের সম্পর্ক বিশেষত, বাণিজ্য সম্পর্ক কোথায় গিয়ে ঠেকে, কিভাবে তা সেখানে পৌঁছাবে; জট খুলবে নাকি, সঙ্ঘাত চরমপথ নিবে ইত্যাদি শুধু তাদের দুই রাষ্ট্রেরই নয়, এটা আমাদের চলতি গ্লোবাল রাষ্ট্রব্যবস্থা, এই অর্ডারে অদল-বদল ঘটিয়ে দেয়ার মত পটেনশিয়াল ক্ষমতা রাখে। বাইডেন প্রশাসনের আমলে কী হতে যাচ্ছে, সেটা আপাতত ততটুকু প্রকাশিত যতটুকু বাইডেন তার স্টাফ-উপদেষ্টা হিসেবে কাদের নিয়োগ দিচ্ছেন, তাদের চিন্তাভাবনা অভিমুখ-দিশা কেমন বা ব্যাকগ্রাউন্ড ও কাজকর্মের অভিজ্ঞতা কেমন, তা দেখে যা অনুমান করা যায়।
এনিয়ে হংকংভিত্তিক এশিয়া টাইমস পত্রিকা খবর দিচ্ছে, চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রেগুলার ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র বলেছেন, চীন আশা করে চার বছর আগে তাঁদের সম্পর্ক যেমন ছিল তেমনটাই ফিরে আসবে এটা তারা আশা করে – ইংরেজি শব্দটা ছিল সম্পর্ক যেন “ব্যাক অন ট্র্যাক” – এমন হয়ে [The Chinese government hopes Sino-United States relations will get back on track after the Biden administration took office ]।
এদিকে বাইডেনের নয়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্থনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, তিনি মনে করেন বিভিন্ন ইস্যুতে ট্রাম্পের চীনকে ডিল করার যে ধরন (ওয়ে অব হ্যান্ডলিং)তা তার পছন্দ নয় যদিও তাঁর অনেক শক্ত অ্যাপ্রোচ সঠিক ছিল। এটাকে অনেক কূটনীতিক ব্যাখ্যা করেছেন, শুরুতেই নতুন প্রশাসন চীনের প্রতি ভীষণ উদার অথবা “ট্রাম্পের সবই ভুল ছিল” এমন বলার ইমেজ নিয়ে শুরু করতে চাইছেন না; যদিও এতে এটাও ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, চীন ইস্যুতে তারা ট্রাম্পের পথে আগাবেন না। [Antony Blinken, the incoming US Secretary of State, said Tuesday that he disagreed with Trump’s way of handling China in several areas, but believed that Trump was right in taking a tough approach to Beijing]।
ট্রাম্প-পম্পেও এর শেষ প্রতিহিংসার কাঁটা বিছিয়ে যাওয়াঃ
ওদিকে ট্রাম্পের ক্ষমতা ছাড়ার মাত্র এক সপ্তাহ আগে এক প্রতিহিংসাপূর্ণ সিদ্ধান্ত ও কিছু কাজ করে গেছেন একনিষ্ঠ পররাষ্ট্রমন্ত্রী পম্পেও। ওয়াশিংটন পোস্ট এনিয়ে শিরোনাম ব্যবহার করেছে ‘কূটনৈতিক তাণ্ডবলীলা’ বলে [Trump and Pompeo’s campaign of ‘diplomatic vandalism’]। যেমন গত চল্লিশ বছরের আমেরিকার আভ্যন্তরীণ তাইওয়ান নীতি-গাইড লাইন বলে শক্ত পালনীয় এক নীতি ছিল। ট্রাম্প-পম্পেও ক্ষমতা ছাড়ার আগে প্রতিহিংসায় তা নির্দ্বিধায় ছিড়ে ফেলে দিয়ে গেলেন। এছাড়া এমন আরও আছে।
গত ১৯৪৯ সালের মাওয়ের চীনা বিপ্লবের পর থেকে চীনের নিরবচ্ছিন্ন অবস্থান হল, ‘এক চায়না পলিসি’ [One China Policy] শক্তভাবে অনুসরণ করে চলা। কথাটার ব্যবহারিক মানে যেখান থেকে উদয় হয়েছিল, চীনের নেতা মাও তাঁর ১৯৪৯ সালের বিপ্লবে সারা মূলভুখন্ড দখল করে ফেলেছিলেন। এতে মাওয়ের বাহিনীর এনিমি চীনা ন্যাশন্যালিস্ট চিয়াং কাইশেক তাইওয়ানে পালিয়ে গিয়ে আশ্রয় নেন। কিন্তু সময়কাল হিসাবে সেটা ছিল হিটলারকে পরাজিত করা আর জাতিসংঘের জন্ম দেয়া এক যুদ্ধবিরোধী থিতু গ্লোবাল অর্থনীতি গড়বার সময়। তাই এই আবহ-তে আমেরিকান রুজভেল্ট পরবর্তি ট্রুম্যান, সোভিয়েত স্টালিন আর বৃটেনের প্রবল আপত্তি গড়ে উঠেছিল মাওকে আর তাইওয়ান দখলে না যেতে। সেসময় এমন কিছু ঘটলেই দেশটাই ভাগ করে বিবদ্মানদের দুই অংশে আলাদা রাষ্ট্র করার দিকে ঠেলে দিয়ে আপাত সমাধান পাবার ঝোঁক অনেক বেশি ছিল। যেমন কোরিয়া অথবা ভিয়েতনাম এভাবেই শর্টকাটে হাটতে রাষ্ট্র ভাগ করা হয়েছিল। চীন-তাইওয়ানও এমনই এক চিহ্ন।
তাই সেই থেকে শুরু হয় মাওয়ের চীনের এক চায়না নীতি যে, তাইওয়ান কোনো আলাদা রাষ্ট্র নয়, চীনেরই অংশ। তাই অন্য যেকোনো দেশ নয়াচীনের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক করতে চাইলে তাকে ‘একচীন পলিসি’ মানতে প্রতিশ্রুতি দিতে হয় আগে। যে রাষ্ট্র লিখিত প্রতিশ্রুতি দেয় না চীন তার সাথে কূটনৈতিক সম্পর্কই করে না। এককথায়, এ প্রসঙ্গে একমত না হলে চীন সে রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক করে না। তাই আমেরিকার ক্ষেত্রেও ১৯৭৯ সালে ১ জানুয়ারি চীন-আমেরিকা প্রথম পরস্পরকে কূটনৈতিক স্বীকৃতি বিনিময় করার সময় আমেরিকাকে তাইওয়ানের হাত ছেড়ে মূল ভূখণ্ড চীনকে জানাতে হয়েছিল যে আমেরিকা একচীন পলিসির প্রতি সম্মতি আছে। ফলে আমেরিকাকে তাইওয়ানের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করতেও হয়েছিল আগে। মানে আমেরিকার সরকারি অবস্থান হল, তাইওয়ান আলাদা কোন রাষ্ট্রই নয়। তবে চীন তাইওয়ানের সাথে যেকোনো রাষ্ট্রের বাণিজ্যিক সম্পর্ক রক্ষার ব্যাপারে, “ট্রেড রিলেশন অফিস” খুলতে আপত্তি করে না। এমনকি চীনের নিজেরই তাইওয়ানের সাথে সেসব সম্পর্কই আছে। আর এই সূত্রে সেই থেকে আমেরিকান ফরেন অফিসে অভ্যন্তরীণভাবে কিছু আইনি সার্কুলার জারি করা আছে যে, আমেরিকান কূটনীতিকরা ‘একচীন পলিসি’ মেনে চলতে কী কী করবেন আর কী কী কখনো করবেন না। কিন্তু পম্পেও গত ১০ জানুয়ারি ২০২১ এক ঘোষণা করেন, তিনি চীনের একচীন নীতি মানার জন্য আমেরিকা স্বেচ্ছায় যেসব শর্ত মানতে অভ্যন্তরীণ সার্কুলার দিয়েছিল, সেসব সার্কুলার তিনি প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন। এটাকে কূটনীতিক বিষয় নিয়ে একধরনের ফাজলামো করাই বলা চলে।
যেখানে চীন-আমেরিকা কূটনৈতিক সম্পর্ক শুরু করার ক্ষেত্রে এটা ছিল উভয়ের মেনে নেয়া একটা শর্ত। সেখানে এই শর্তপালনের জন্য আমেরিকার অভ্যন্তরীণ সার্কুলার যেটা ঠিক কোনো চুক্তির অংশ নয় বটে, কিন্তু তা প্রত্যাহারের কথা কেন আসছেন পম্পেও? তবুও সম্পর্ক-চুক্তি মেনে চলার জন্য এতদিন জারি থাকা অভ্যন্তরীণ সার্কুলার বাতিল করে দেয়াটা একটা অকূটনীতিক আচরণ। কারণ পম্পেও সাহস করে অর্থপূর্ণ কিছু করতে চান তাইলে তার এমন ঘোষণা করে দেয়া দরকার ছিল যে, ‘চীনের সাথে আমেরিকার সম্পর্ক আমরা ছিন্ন করছি”। কিন্তু না। ট্রাম্প-পম্পেও গোষ্ঠির সেই মুরোদ নাই। তাই ঘুমিয়ে থাকা মানুষকে কষে গালি দেয়া মত এটা – যার শুনতে পাবার সম্ভাবনাই নাই। এটা অনেকটা ‘গরুর মাংস খাবো না কিন্তু ঝোল খাবো’ বলা ধরণের। অভ্যন্তরীণ প্রশাসনের মধ্যে সার্কুলার প্রত্যাহার করার মানে, চীনকে উসকানি দেয়া যে, তাইওয়ান যে চীনের অংশ, সে কথা মানলাম না। কিন্তু আবার ট্রাম্প-পম্পেওর সেই মুরোদ নেই যে, সে কথা মুখের ওপর চীনকে বলে জানায়। তা হলে এর উদ্দেশ্য কী? এতে পম্পেও কী অর্জন করলেন? অন্যের বাসায় ঢিল মেরে পালিয়ে গেলেন, যাতে বাড়ির মালিক বাইরে এসে বাইডেনকে দেখে মনে করেন তিনিই ঢিলটা মেরেছেন। অথবা অন্য ভাষায় বললে এটা হল, অন্যকে কষ্ট দিয়ে নিজে সুখ পাওয়া। অন্যের আসা যাওয়ার পথে কাঁটা বিছিয়ে রেখে তার ক্ষতি করার ‘সুখ’ নেয়া।
এছাড়াও আরও আছে। যেমন এরই আরেক অংশ হল, পম্পেও ওদিনই ঘোষণা দিলেন “বাংলাদেশে আলকায়েদা আছে”। অথচ ট্রাম্প-পম্পেও আর ক্ষমতাতেই থাকবেন না। তা হলে এমন কথা বলে তার কী লাভ হল? কারণ যদি আলকায়েদা থাকেও তাতে বাইডেন কী করবেন তা তো বাইডেনই জানেন। তাহলে পম্পেও এর লাভ হল এই যে, বাইডেন প্রশাসনের সাথে আগেই হাসিনা সরকারের সম্পর্কটা তিতা করে দিয়ে চরমে উঠার দিকে উস্কে দেয়া। আমরা দেখলাম হাসিনা ঠিক ট্রাম্প-পম্পেওকে নয়, আমেরিকার প্রশাসনকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ বলে কড়া বিবৃতি দিয়েছেন। এর রেশ ও প্রভাব এখন শপথ নিয়ে ক্ষমতায় এসে যাওয়া বাইডেন প্রশাসনের উপরও পড়বে। একই ধরণের অভিযোগ তিনি করেছেন ইরানের বেলায়ও, যে “আলকায়েদা আছে”। যাতে বাইডেন ইরান-আমেরিকা নিউক্লিয়ার ছাড় দিবার সমঝোতা চুক্তি সহজেই আবার শুরু করতে না পারেন। এর আরেক মানে তা হলে পম্পেও চেয়েছেন – তিনি এমন কিছু ঘটিয়ে দিলে এতে তার অনুমান হল, বাইডেনের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক ভালো যাবে না। তাই এটাই তার ভালো পছন্দ যে, এটাকে এদের মধ্যে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগে ফেলে দিলে ঝগড়াটা বেশি তিতা হবে। তাই তিনি এটি করেছেন।
এ তো গেল যেটা চলে গেছে সেই ট্রাম্প প্রশাসনের আলাপ। কিন্তু যেভাবেই হোক ঐ পর্ব এখন মৃত। আর শকুনের বদ দোয়ায় গরু মরা বেড়ে যায় না। বরং চার দিকে জল্পনা কল্পনা এবং বাস্তবতা হল, বাইডেন নিজে সরাসরি কী করতে যাচ্ছেন? ভারতের মত বাংলাদেশেও সরকারের হিউম্যান রাইট চরম ভায়োলেশনের ইস্যুগুলো খুবই শক্তভাবে জোরালো হয়ে উঠতে যাচ্ছে, চারদিকে সেই ইঙ্গিত বেড়েই চলছে।
এছাড়া অন্য প্রসঙ্গে যেমন চীন প্রসঙ্গে বাইডেনের বিদেশনীতি মূল ধারা যেটা সামনে আসছে তা খবরের শিরোনামের ভাষায় হল, “প্রতিযোগিতা ভালোভাবেই চালাতে হবে কিন্তু (কোনো যুদ্ধের) বিপর্যয় ঘটানো যাবে না” [Competition Without Catastrophe]। এটা নিরস্ত্র লড়াই করে রাখতে হবে। নিজ নিজ স্বার্থের স্ট্রাটেজিক আর কূটনীতিতে লড়াই চালাতে হবে।
যেমন- শপথের দিন বাইডেন বলছেন, তিনি তার শাসনের প্রথম ১০০ দিনের মধ্যে এমন কিছু করতে চান, যা দেশ-বিদেশে মানুষের কাছে বার্তা দেবে যে আমেরিকা ফিরে এসেছে- ‘আমেরিকা ইজ ব্যাক’! [Joseph Biden has promised a fast and furious agenda in his first 100 days in office in a bid to show the world “America is back” after four erratic and divisive years under the outgoing Donald Trump.]
বলা হয়ে থাকে, আমেরিকান প্রেসিডেন্টরা প্রথম ১০০ দিনের মধ্যে কী কী করে দেখাতে পারেন, তা দেখেই বোঝা যায় তার আমলটা কেমন যাবে। আর এটা প্রথমবারের মতো চালু হয়েছিল আমেরিকার টানা চারবারের (১৯৩৩-৪৫) প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের আমল থেকে। এ বিচারে বলা যায়, বাইডেনের প্রথম ১০০ দিনের আলাপ তোলার শুরু। তবে এটি মূলত অভ্যন্তরীণ ইস্যু আর তাতে অর্জন কী কী করা হয় বা যায় সেই বিষয়। কিন্তু লক্ষ করার বিষয় হল – বাইডেন কথাটা বলেছেন, ‘এটি করা হবে দুনিয়াকে দেখানোর জন্য’। আবার বলা হচ্ছে দুনিয়া দেখবে যে ‘আমেরিকা ফিরে এসেছে’। কিন্তু কোথায় চলে গিয়েছিল আমেরিকা, ট্রাম্পের হাত ধরে? আর কোথায়ইবা সে ফিরতে চায়?
এর জবাব হল, আমেরিকা মূলত যে গত ৭৫ বছর ধরে এক গ্লোবাল সিস্টেমের নেতা ছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও সেসব কিছু ভুলে ট্রাম্পের হাত ধরে জাতিবাদী হয়ে যায়। সেখান থেকে সে গ্লোবাল নেতৃত্বে ফিরতে পারুক আর না পারুক; কিন্তু সে গ্লোবাল সিস্টেমে ফিরতে চায়, প্লেয়ার হতে চায়, গ্লোবাল পরিপ্রেক্ষিতে নিজের করণীয় ও ভূমিকা নিতে চায়। এই মেসেজই বাইডেন বারবার দিতে চাইছেন। এর বিপরীতে চীনা বিদেশ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ২০ জানুয়ারি জো বাইডেনের কাছে আবেদন করে বলেছেন, চীনের সাথে আমেরিকা যেন যুক্তিবুদ্ধি খাটিয়ে আচরণ (মানে রাগ বা বিদ্বেষে নয়) করে, বিশেষত দ্বিতীয়-বৃহত্তম অর্থনীতির একটা দেশ যেমন আশা করে। আরো আছে। চীন বলছে চার বছর আগে যেমন চীন-আমেরিকা আমরা ছিলাম তেমন জায়গায় (ব্যাক অন ট্র্যাক) ফিরে যেতে।
মজার কথা হলো, এই শেষ বাক্যে এসে দেখা যাচ্ছে- চীন ও আমেরিকার মন্তব্যের মধ্যে এক বিশাল মিল দেখা যাচ্ছে। এ যেন প্রেমের প্রস্তাবের আগেই দু পক্ষই চাচ্ছে যে সে প্রত্যাখ্যাত হবেন না, তা আগাম নিশ্চিত হতে।
অর্থাৎ শপথের দিনের মহড়া দেখে মনে হয়েছে তারা এক রাস্তা ধরেই এগোচ্ছেন হয়ত! যদিও পথে অনেক বাধাও আছে। আর তা কী হয়, দেখার জন্য অন্তত প্রথম ছয় মাস পর্যন্ত আমাদেরকে অপেক্ষা মনে হচ্ছে লাগবেই। কারণ কাজটা একেবারেই সহজ নয়। দেখা যাক!
লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক,
GOUTAM DAS