মধ্যপ্রাচ্যের পর বাংলাদেশের অন্যতম বড় শ্রমবাজার মালয়েশিয়া। যদিও বিগত দুই বছর ধরে কর্মী রফতানি প্রায় বন্ধ রয়েছে দেশটিতে। এ অবস্থায় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার আবার খোলার বিষয়ে ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে দুই দেশের মধ্যে ভার্চুয়াল বৈঠক হয়। তবে কর্মী পাঠাতে রিক্রুটিং এজেন্সির সংখ্যা কত হবে, সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না হওয়ায় আবারো অনিশ্চয়তায় পড়েছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলার বিষয়টি।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দুই দেশের যৌথ বৈঠকের আলোচনায় মোট চারটি এজেন্ডা নির্ধারণ করা ছিল। যার একটি ছিল রিক্রুটিং এজেন্সির সংখ্যা নির্ধারণ, যা নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ অবস্থায় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার আবার খোলার বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে দুই দিন ধরে চলা গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়। ফলে আবারো অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে দেশটির শ্রমবাজার খোলার বিষয়টি নিয়ে। তবে কর্মীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় এবং কর্মী পাঠাতে পাঁচ বছরের জন্য সমঝোতা স্মারকে (এমওইউ) স্বাক্ষর করা হয়।
এ প্রসঙ্গে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে বলেন, মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকে ২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সি নির্ধারণের প্রস্তাব ছিল। তবে শ্রমবাজারে রিক্রুটিং এজেন্সির সংখ্যা কত হবে, তা নিয়ে দুই দেশ একমত হতে পারেনি।
এদিকে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি পাঠানোর জন্য নতুন করে স্বল্পসংখ্যক রিক্রুটিং এজেন্সির সিন্ডিকেট তৈরির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি (বায়রা) সিন্ডিকেট নির্মূল ঐক্যজোট। সব বৈধ এজেন্সিকে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর সুযোগ দেয়ার দাবি জানিয়ে তারা বলছেন, মালয়েশিয়ায় জনশক্তি প্রেরণকারী অন্য ১৩টি দেশ কোনো নির্দিষ্ট এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী পাঠায় না। সেখানে সব বৈধ এজেন্সিই কর্মী পাঠানোর সুযোগ পায়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও সব বৈধ এজেন্সিকে সুযোগ না দিলে আগের মতো নির্দিষ্ট সিন্ডিকেটের হাতে চলে যাবে শ্রমবাজারটি।
বায়রা সিন্ডিকেট নির্মূল ঐক্যজোটের দাবি, ২০১৭-১৮ সালে ১০টি এজেন্সির মাধ্যমে মাত্র ২ লাখ ৫৯ হাজার কর্মী পাঠানো হয়। অথচ ১৫ লাখ কর্মী পাঠানোর সুযোগ ছিল। এতে সব এজেন্সি ব্যবসা করার সুযোগ হারায়, আর দেশ হারায় বিপুলসংখ্যক কর্মী পাঠানোর সুযোগ। সিন্ডিকেটের কারণে দেশ ও অন্য এজেন্সিগুলোর এ ক্ষতি হয়েছে।
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, গত প্রায় দুই বছর ধরে কর্মী রফতানি প্রায় বন্ধ রয়েছে মালয়েশিয়ায়। ২০১৭ সালে দেশটিতে যান ৯৯ হাজার ৭৮৭ জন কর্মী। পরের বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালে যান প্রায় ১ লাখ ৭৬ হাজার। তবে কর্মী রফতানির নামে দুদেশের মধ্যে গড়ে ওঠে একটি চক্র। বাংলাদেশী ১০ রিক্রুটিং এজেন্সির গঠিত ওই চক্র হাতিয়ে নেয় কয়েক হাজার কোটি টাকা। এ অভিযোগে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশী কর্মী নেয়া বন্ধ হয়।
২০১৯ সালে দেশটিতে গেছেন মাত্র ৫৪৫ জন। পুনরায় কর্মী রফতানি শুরু করতে বিগত বছরে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে উচ্চপর্যায়ের একাধিক বৈঠকেও কোনো ফল আসেনি। যদিও মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে রয়েছে কর্মীর চাহিদা, যা প্রতিনিয়তই দখলে নিচ্ছে ভারত, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া এমনকি চীনের কর্মীরাও।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের কর্মীদের জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার উন্মুক্তকরণ ও প্রাসঙ্গিক অন্যান্য বিষয়ে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রীর সঙ্গে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রীর একটি বৈঠক গত বছর ১৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার পুনরায় বাংলাদেশের জন্য উন্মুক্তকরণ, সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর, কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে অনলাইন সিস্টেম চালু করা, কর্মী প্রেরণে রিক্রুটিং এজেন্টের সম্পৃক্ততা, পরবর্তী জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ সভার আয়োজন এবং কভিড-১৯ পরিস্থিতিতে আটকে পড়া বাংলাদেশী কর্মীদের মালয়েশিয়ায় প্রত্যাগমন প্রভৃতি বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়। বৈঠকে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশী কর্মীদের জন্য শ্রমবাজার শিগগিরই উন্মুক্তকরণের বিষয়ে মালয়েশিয়ার মানব সম্পদমন্ত্রী তার সম্মতি ব্যক্ত করেন।
সূত্রঃ বণিক বার্তা