সোমবার ‘রাষ্ট্র মেরামতের’ রূপরেখা ঘোষণা করবে বিএনপি
Advertisements

সরকারের পদত্যাগসহ নানা দাবি নিয়ে আজ শুক্রবার থেকে ১০ জুন পর্যন্ত টানা কর্মসূচিতে মাঠে নামছে বিএনপি। জাতীয় নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই রাজপথের কর্মসূচিতে মনোযোগী হচ্ছে দলটি। দলটির নীতি-নির্ধারকরা বলছেন, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনের জন্য তাদের এখন ‘এক দফা, এক দাবি’’ হচ্ছে সরকারের পদত্যাগ। এ দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা মাঠে থাকবে। দলটির নেতারা মনে করছেন, সরকার বিগত দুটি জাতীয় নির্বাচনের মতো আরেকটি একতরফা নির্বাচনের পথে হাঁটলে রাজনৈতিক পরিস্থিতি সহিংসতায় রূপ নিতে পারে।

বিএনপির নীতি-নির্ধারকরা বলেছেন, রমজান ঈদ উদযাপনের জন্য নেতা-কর্মীদের বেশ কিছু দিন কর্মসূচি থেকে বিরত রাখা হয়েছিল। তাদের ধারণা, আজ শুক্রবার থেকে সারা দেশে যে জনসমাবেশ শুরু হচ্ছে, তা আন্দোলনে নতুন মাত্রা দেবে। এখন থেকে আন্দোলনের গতি বাড়তে থাকবে।

দলটির নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে জুলাইকে সামনে রেখে বিএনপি চূড়ান্ত আন্দোলনের পরিকল্পনা করেছে। তবে চলমান কর্মসূচির মাধ্যমে আন্দোলন জমে গেলে যেকোনো সময় নেতা-কর্মীদের মাঠে নামার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। সম্প্রতি বিএনপি এবং অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের রুদ্ধদ্বার বৈঠকগুলোতে এমন বার্তা-ই দেয়া হয়েছে।

উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার, গায়েবি মামলা, পুলিশি হয়রানি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিদ্যুতের লোডশেডিং, আওয়ামী সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতির প্রতিবাদে এবং ১০ দফা দাবিতে গত ১৩ মে রাজধানীতে একটি সমাবেশ থেকে চার পর্বে সারা দেশের জেলা ও মহানগরীতে বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি। আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর উত্তরসহ ২৮ জেলা ও মহানগরে সমাবেশের মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে এর প্রথম পর্ব।

জানা গেছে, আজকের এসব সমাবেশ সফলে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। কেন্দ্র থেকে স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ ১৭ জন সিনিয়র নেতা এসব সমাবেশগুলোতে উপস্থিত থাকবেন। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উপস্থিত থাকবেন ঢাকার সমাবেশে। কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের নিজ নিজ জেলা ও মহানগরে সশরীরে উপস্থিত থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

আগামীকাল শনিবার ২০ মে ঢাকা মহানগর দক্ষিণসহ ২১ জেলা ও মহানগরে, ২৬ মে ঢাকা মহানগর উত্তরসহ ১৯ জেলা এবং ২৭ মে ঢাকা মহানগর দক্ষিণসহ ১৫ জেলা ও মহানগরে একইভাবে সমাবেশ হবে। প্রতিটি সমাবেশেই সিনিয়র নেতারা অংশ নেবেন। ইতোমধ্যে সেই তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কর্মসূচি প্রসঙ্গে বলেন, আমাদের আন্দোলন বিএনপিকে ক্ষমতায় নেয়ার জন্য নয়। আমাদের আন্দোলন জনগণকে সঙ্গে নিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য, গণতান্ত্রিক উপায়ে শান্তিপূর্ণ উপায়ে এই সরকারের পতন ঘটিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য।

২৩ এবং ২৮ মে মহানগরে পদযাত্রা : এ দিকে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে ১০ দফাসহ বিভিন্ন দাবিতে ঢাকা মহানগর ব্যতিরেকে সব মহানগরীতে আগামী ২৩ এবং ২৮ মে দুই দিন পদযাত্রার কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। মহানগরীগুলো হচ্ছে: নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, ময়মনসিংহ, রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, কুমিল্লা, সিলেট ও চট্টগ্রাম।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই কর্মসূচি ঘোষণা করে বলেন, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ মহানগর ছাড়া সব মহানগরীতে পদযাত্রা কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ১০ দফা দাবি এবং গায়েবি মামলা, গ্রেফতার, পুলিশি হয়রানি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে এই কর্মসূচি হবে।

রাজধানীতেও কর্মসূচিমুখর থাকছে বিএনপি। ঢাকায় এসব কর্মসূচির পাশাপাশি পদযাত্রার কর্মসূচিও চলছে। গত বুধবার ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে পৃথকভাবে আয়োজিত পদযাত্রার মধ্য দিয়ে ব্যাপক শোডাউন দিয়েছে বিএনপি। দলটির গুরুত্বপূর্ণ এই সাংগঠনিক ইউনিটের প্রত্যেক থানা, ওয়ার্ড আর ইউনিটের নেতা-কর্মী ছাড়াও বিভিন্ন অঙ্গ-সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মিছিল-সেøাগান পদযাত্রায় অংশ নিতে দেখা গেছে।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণে আগামী ২৩ মে ধানমন্ডি থেকে পদযাত্রা ও উত্তরে গাবতলীর বাগবাড়ী আইএফআইসি ব্যাংকের সামনে থেকে টেকনিক্যাল ও কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ড হয়ে শ্যামলী শিশু মেলার পাশ দিয়ে পঙ্গু হাসপাতালের সামনে দিয়ে ৬০ ফিট রাস্তা পর্যন্ত পদযাত্রা হবে।

এসব কর্মসূচি শেষে ২৯ মে থেকে দলের প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাহাদতবার্ষিকীর কর্মসূচি শুরু করবে বিএনপি। চলবে ১০ জুন পর্যন্ত। মহানগর উত্তর-দক্ষিণের প্রতিটি ওয়ার্ডে দুস্থ ও অসহায়দের মধ্যে বস্ত্র ও খাদ্য বিতরণ এবং দোয়া মাহফিল করা হবে। জানা গেছে, ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত শাহাদতবার্ষিকীর কর্মসূচি পালনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে দলের তরফ থেকে।

সূত্রঃ নয়াদিগন্ত

Advertisements