আইসিটি প্রশিক্ষণ নেই ৮৮% প্রাথমিক শিক্ষকের
Advertisements

কভিড-১৯ সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত বন্ধে লেখাপড়া এগিয়ে নিতে গত বছর প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের জন্য টেলিভিশন ও রেডিওর মাধ্যমে পাঠদান সম্প্রচার শুরু হয়। এ প্রক্রিয়ায় কাঙ্ক্ষিত সফলতা না পেয়ে সম্প্রতি একটি অনলাইন প্লাটফর্মের মাধ্যমে পাঠদানের জন্য শিক্ষকদের নির্দেশনা দিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই)। যদিও ইন্টারনেটের ধীরগতির পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে শিক্ষকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ না থাকায় এ উদ্যোগও ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ডিপিইর জরিপের তথ্য বলছে, দেশের প্রাথমিক শিক্ষকদের ৮৮ শতাংশেরই তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে কোনো প্রশিক্ষণ নেই।

প্রতি বছর দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো থেকে তথ্য সংগ্রহ করে ‘অ্যানুয়াল প্রাইমারি স্কুল সেন্সাস (এপিএসসি)’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করে ডিপিই। সম্প্রতি ২০২০ সালের এপিএসসি প্রতিবেদনের খসড়া চূড়ান্ত করেছে ডিপিই। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৩৩ হাজার ২টি। এসব বিদ্যালয়ের পাঠদানে কর্মরত শিক্ষকের সংখ্যা ৭ লাখ ৪০ হাজার ৪৭১। এ শিক্ষকদের মধ্যে আইসিটি বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন মাত্র ৮৯ হাজার ৯৮৮ জন। সে হিসাবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৮৮ শতাংশ শিক্ষকই গুরুত্বপূর্ণ এ প্রশিক্ষণ পাননি।

শিক্ষাবিদরা বলছেন, করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া এখনো অনিশ্চিত। তাই অনলাইনসহ বিকল্প উপায়ে শিক্ষার্থীদের কাছে পাঠদান পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে হবে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ বণিক বার্তাকে বলেন, আসলে আমরা তো কেউই করোনা পরিস্থিতির জন্য আগে থেকে প্রস্তুত ছিলাম না। যেসব দেশ করোনার আগে তথ্যপ্রযুক্তির অবকাঠামো ও গুণগত সেবা নিশ্চিত করতে পেরেছিল, তারা অনলাইন শিক্ষায় বেশ সফলতা পেয়েছে। কিন্তু আমরা সেটি পারিনি। এখন যে পরিস্থিতি, হঠাৎ সিদ্ধান্তে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়াও নিরাপদ নয়। অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের পাঠদান দেয়াটাও জরুরি। তাই আমাদের অনলাইনসহ যতগুলো ভিন্ন উপায় রয়েছে সেগুলোতে জোর দিতে হবে। কেননা করোনা কবে যাবে, সেটি আমরা কেউই বলতে পারছি না। এক্ষেত্রে শিক্ষকদেরও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে হবে। প্রয়োজনে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবককেও প্রশিক্ষণের আওতায় আনা লাগবে।

জানা যায়, গুগল মিটে ক্লাস নেয়ার নির্দেশনার পর প্রথমে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের ডেকে ধারণা দেন শিক্ষা কর্মকতারা। এরপর বিদ্যালয়ের প্রধানরা সহকারী শিক্ষকদের প্লাটফর্মটির বিষয়ে ধারণা দিয়ে এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পাঠদান দেয়ার নির্দেশনা দিচ্ছেন। যদিও এ বিষয়ে পূর্বজ্ঞান বা প্রশিক্ষণ না থাকায় তাত্ক্ষণিকভাবে অনেক শিক্ষকই এর সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারছেন না। বিশেষ করে অপেক্ষাকৃত বেশি বয়সী শিক্ষকরা এ বিষয়ে কম দক্ষ।

এ প্রসঙ্গে আশরাফুল ইসলাম নামের একজন প্রধান শিক্ষক বলেন, যেসব শিক্ষকের আগে থেকে প্রশিক্ষণ ছিল তারা খুব সহজেই বিষয়টি গ্রহণ করেছেন। এরই মধ্যে তারা ক্লাসও নেয়া শুরু করেছেন। তারা শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের খুব সহজেই এ বিষয়ে ধারণা দিয়ে ক্লাস করার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে পারছেন। অন্যদিকে কিছু শিক্ষক স্মার্টফোন ব্যবহার শুরু করেছেন মাত্র কিছুদিন আগে থেকে। তাই তারা ডিভাইস ব্যবহারে খুবই অনভিজ্ঞ। এসব শিক্ষক অনলাইন ক্লাস বিষয়ে খুব বেশি আগ্রহী নন।

আইসিটি প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে শহরের চেয়ে গ্রামের প্রতিষ্ঠানগুলো বেশ পিছিয়ে। এমনই একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কুড়িগ্রামের মশালের চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টিতে কর্মরত তিনজন শিক্ষকের কেউই আইসিটি বিষয়ে প্রশিক্ষণের আওতায় আসেননি। ফলে গুগল মিটে ক্লাস নেয়ার বিষয়ে এখনো বিদ্যালয়টিতে কোনো উদ্যোগই নেয়া হয়নি।

প্রশিক্ষণের পাশাপাশি ডিভাইস না থাকা ও ইন্টারনেটের ধীরগতিকেও অনেক বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেখা হচ্ছে অনলাইন ক্লাসের ক্ষেত্রে। কেননা শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের অনেকেরই স্মার্টফোন নেই। আবার অনেকের থাকলেও অভিভাবক বাড়ির বাইরে থাকায় তারা ফোন ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছে না।

খালেদা আখতার নামের একজন সহকারী শিক্ষক বলেন, গুগল মিটে ক্লাস নেয়ার উদ্দেশ্যে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ডিভাইস বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করি। দেখা যায়, প্রথম শ্রেণীর ২২ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র দুজনের তাদের বাড়িতে স্মার্টফোন রয়েছে। অন্যান্য শ্রেণীর ক্ষেত্রেও অধিকাংশ শিক্ষার্থীর বাড়িতে স্মার্টফোনের ব্যবস্থা নেই।

এদিকে এপিএসসি প্রতিবেদন বলছে, ২০২০ সালে দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী সংখ্যা বেড়েছে। ২০১৯ সালে দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থী সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৬৩ লাখ ৩৬ হাজার ৯৬ জন। ২০২০ সালে এসে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৭৬ লাখ ৩ হাজার ৮৩৯।

এপিএসসির প্রতিবেদনে ২০২০ সালের শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হারের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে দেখা যায়, ২০২০ সালে দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ঝরে পড়ার হার কিছুটা কমেছে। ওই বছর শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার ছিল ১৭ দশমিক ২ শতাংশ। এর আগের বছর শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার এ হার ছিল ১৭ দশমিক ৯ শতাংশ।

সূত্রঃ বণিক বার্তা

Advertisements