Hatred of Bangladesh
Advertisements

অর্ক ভাদুড়ি।


বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার রাজনৈতিক সম্পর্ক সাম্প্রতিক সময়ে বেশ আলোচিত বিষয় হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে ভারতীয় মিডিয়ায় বাংলাদেশ বিদ্বেষের প্রবণতা, পশ্চিমবঙ্গে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির প্রভাব, এবং এই প্রেক্ষাপটে দুই দেশের জনগণের মধ্যকার সম্পর্কের অবনতির বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন ভারতীয় সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অর্ক ভাদুড়ি। বাংলা আউটলুকে আবদুল্লাহ মাহফুজ অভি সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের বিভিন্ন দিক, ফেক নিউজের প্রভাব, এবং সম্পর্ক উন্নয়নের সম্ভাব্য পথ।

অর্ক ভাদুড়ির মতে, ভারতীয় মূলধারার মিডিয়ায় বাংলাদেশকে দানবায়নের একটি সংগঠিত প্রচেষ্টা চলছে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তালেবানি রাষ্ট্রে পরিণত হওয়া, সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন, এমনকি স্বাধীনতা দিবস উদযাপন না করার মতো ভিত্তিহীন গুজব ছড়ানো হচ্ছে। তিনি বলেন, “এই প্রচারণার ফলে পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের সাধারণ মানুষের মধ্যে বাংলাদেশ সম্পর্কে বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, পশ্চিমবঙ্গে চট্টগ্রাম দখলের মতো উগ্র বক্তব্য উঠে আসছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশেও ভারতের পতাকা পদদলনের মতো ঘটনাগুলি দুই দেশের জনগণের সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

অর্ক ভাদুড়ি বলেন, “শেখ হাসিনার আমলে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক সমতার ভিত্তিতে ছিল না। তবে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক গড়ে তোলার সম্ভাবনা রয়েছে।” তিনি উল্লেখ করেন, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি জানিয়েছেন যে ভারত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করতে চায়।

ভারতীয় গণমাধ্যমের বিদ্বেষমূলক প্রচারের কারণ হিসেবে অর্ক বলেন, “এটি একটি ‘অপর’ নির্মাণের কৌশল, যা হিন্দুত্ববাদী রাজনীতিকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করে। বাংলাদেশের মুসলমানদের প্রতি বিদ্বেষ প্রচারের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গে হিন্দু ভোট একীভূত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।”

অর্ক ভাদুড়ি জানান, শেখ হাসিনার সরকারের প্রতি গণঘৃণা এবং ভারতের সমর্থনপুষ্ট সরকারের ধারণার কারণে বাংলাদেশে ভারতবিরোধিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সীমান্ত হত্যা, অসম চুক্তি, এবং পানিসংকটও এর জন্য দায়ী।

পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, বিজেপির উত্থান পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে শক্তিশালী করেছে। তবে মুসলিম ভোটের কারণে বিজেপির জন্য ক্ষমতায় আসা কঠিন হলেও অসম্ভব নয়।

ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের উপায় হিসেবে অর্ক ভাদুড়ি বলেন, “দুই দেশের মানুষের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করতে ফ্যাক্ট চেকিং ও বিদ্বেষের বিরুদ্ধে সচেতন প্রচেষ্টা জরুরি। বাংলাদেশ ও ভারতের পতাকার অবমাননা বন্ধে উভয় দেশকেই পদক্ষেপ নিতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ ব্যর্থ হলে জনগণের স্তরে পিপলস ফোরাম গঠন এবং সম্প্রীতিমূলক কার্যকলাপের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে সৌহার্দ্য গড়ে তোলা সম্ভব।”

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে ভারতের সহযোগিতার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার প্রচার সম্পর্কে অর্ক ভাদুড়ি বলেন, “ভারত মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা করেছিল, কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ছিল তাদের নিজস্ব সংগ্রামের ফসল। এই ঘটনাকে উগ্র জাতীয়তাবাদী প্রচারের অংশ বানানো দুর্ভাগ্যজনক।”

অর্ক ভাদুড়ি বিশ্বাস করেন, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বিদ্বেষ কমিয়ে সম্পর্ক পুনর্গঠনের জন্য উভয় দেশকেই দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। বিদ্বেষের রাজনীতি ও মিথ্যা প্রচারণার বিরুদ্ধে জনগণের সচেতন হওয়া এবং ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টাই হতে পারে সঠিক পথ।

Advertisements