কক্সবাজার জেলা কারাগারে অঘোষিত ‘ফার্নিচার কারখানা’ গড়ে তুলেছেন সুপার নেছার আলম। ওই কারখানায় শ্রমিক হিসাবে কাজ করছেন হাজতিরা। এমন গুরুতর অভিযোগ উঠেছে জেল সুপার নেছার আলমের বিরুদ্ধে। এদিকে জেল সুপারের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে জনবল নিয়োগ, অর্থের বিনিময়ে বন্দি বেচাকেনা, মাদকাসক্তদের কারাগারে বিশেষ সুবিধা প্রদানসহ নানা অভিযোগের তদন্তে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের সহকারী পরিচালক মো. সাইফুজ্জামানকে প্রধান করে দুই সদস্যের ওই কমিটিতে রয়েছেন সহকারী পরিচালক মো. আবুল কালাম আজাদ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নেছার আলমের জন্ম সুনামগঞ্জের দিরাইয়ের গছিয়া গ্রামে। তাদের টানাটানির সংসারে অভাব ছিল নিত্যসঙ্গী। অনিয়ম-দুর্নীর মাধ্যমে এখন টাকার পাহাড় বানিয়েছেন নেছার আলম। তবে বিভিন্ন সময় তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠলেও অদৃশ্য শক্তির বলয়ে তদন্তে কূলকিনারা পায়নি সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর। বিগত দিনে তার বিরুদ্ধে দুদকে ৫টি অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলেও তদন্ত কার্যক্রম আলোর মুখ দেখেনি। জানা গেছে, ২০০৬ সালে নেছার আলম ভোলা জেলা কারাগারে জেলারের দায়িত্ব পালনকালে চরের একটি মারামারি মামলায় জামাই-শ্বশুর কারাবন্দি ছিলেন। এ সময় তিনি বন্দি শ্বশুরের কাছে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেন। টাকা না পেয়ে মেয়েজামাইকে দিয়ে কারাগারে বন্দিদের সামনেই ওই শ্বশুরকে পাশবিক নির্যাতন করতে বাধ্য করা হয়। ঘটনা তদন্তে সত্যতা পেয়ে নেছার আলমকে পদাবনতি হিসাবে ডেপুটি জেলার করা হয়। এ ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগও তার শাস্তি বহাল রাখেন। পরে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে শাস্তি বহাল রাখা হলেও অদৃশ্য শক্তির জোরে উচ্চমহলকে ম্যানেজ করে মামলা থেকে খালাস পান তিনি। তার রোষানলে পড়ে চাকরি হারান ঘটনার তদন্তকারী কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ সরকার।
এ বিষয়ে সেই তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেন, নেছার আলম খুব ভয়ংকর মানুষ। আমি তার বিষয়ে কিছু সাংবাদিককে বলে বিপদ ডেকে আনতে চাই না।
কক্সবাজার কারাগারে নেছার আলমের ফার্নিচার কারখানা : কারাবিধি লঙ্ঘন করে কক্সবাজার কারাগারে হাজতিদের দিয়ে কাঠের ফার্নিচার তৈরির কারখানা গড়ে তুলেছেন সুপার নেছার আলম। কারাগার থেকে সদ্যমুক্তি পাওয়া রবিউল আলম যুগান্তরকে জানান, জেল সুপার নেছার আলম তার বাড়ির জন্য কারাগারের ভেতরে আলিশান অর্ধশতাধিক দরজা তৈরি করছেন। হাজতি কাঠমিস্ত্রিদের দিয়ে ওই কাজ করানো হচ্ছে।
কেউ কাজ করতে অস্বীকৃতি জানালে সেলে আটকে রাখার ভয় দেখানো হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে জেল সুপার নেছার আলমকে এ প্রতিবেদকের নম্বর থেকে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি। পরে অপরিচিত নম্বর থেকে কল করা হলে তিনি অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে কোনো কথা বলবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন। একপর্যায়ে কথা শেষ না হতেই তিনি ফোন কেটে দেন।
সূত্রঃ যুগান্তর