![আমরা আমেরিকাকে উপেক্ষা করতে পারি না: পররাষ্ট্র মন্ত্রী সীমান্ত হত্যা ভারতের জন্য লজ্জাজনক](https://i0.wp.com/bhawalbarta.com/wp-content/uploads/2022/10/%E0%A6%B8%E0%A7%80%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A4-%E0%A6%B9%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE-%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%A4%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%9C%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%AF-%E0%A6%B2%E0%A6%9C%E0%A7%8D%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A6%A8%E0%A6%95.jpg?fit=900%2C489&ssl=1)
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ‘সুপারপাওয়ার’ আখ্যা দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, আমরা কখনোই তাদের উপেক্ষা করতে পারি না এবং করিও না। সরকার যুক্তরাষ্ট্রের পরামর্শকে অত্যন্ত গুরত্বসহকারে গ্রহণ করে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আছি। যুক্তরাষ্ট্রও আমাদের সঙ্গে রয়েছে। বাংলাদেশের অত্যাসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান প্রসঙ্গে একাধিক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। সোমবার সেগুনবাগিচায় গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছিলেন মন্ত্রী মোমেন। তার কাছে একজন সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিল নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমাদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছিল। তারা এখন কিছু বলছে না। সরকারের কোন উদ্যোগে তারা চুপ হয়ে যেতে বাধ্য হলেন? জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘কী বলেন, বাধ্য করব কীভাবে? পাগল নাকি! কোনো সুযোগ নেই। আমাদের সেই ক্ষমতা নেই।’
বাংলাদেশের বন্ধু রাষ্ট্রগুলো বিভিন্ন সময়ে নানা বিষয়ে উপদেশ দেয় জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কারও যদি ভালো উপদেশ থাকে স্বচ্ছ, সুন্দর নির্বাচনের জন্য, আমরা সেটা অবশ্যই গ্রহণ করবো। আমরা তাদের পরামর্শকে স্বাগত জানাই।
আমরা তো পণ্ডিত না। তবে মন্ত্রী বলেন, যারা মাতব্বরি করবে, তাদের সহ্য করা হবে না। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ পরামর্শ দিলে তা গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া হয় পুনরুল্লেখ করে মন্ত্রী মোমেন বলেন, আমরা তাদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখি; যথেষ্ট সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায় উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরাও তা-ই চাই। তারা আমাদের সাহায্য করছেন। একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচনের জন্য সরকার নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমি নিশ্চিত যে, আমরা যদি একটি সুন্দর নির্বাচন করতে পারি, তাহলে অবশ্যই আমেরিকা আমাদের সঙ্গে থাকবে। তারা আমাদের বন্ধু দেশ। শুধু নির্বাচন নয়, তাদের সঙ্গে আমাদের বিভিন্ন রকম সম্পর্ক আছে। আমেরিকা সব সময় বাস্তববাদী।
মন্ত্রী মোমেন মনে করেন নির্বাচন যদি অবাধ ও নিরপেক্ষ হয় আর তাতে বিএনপি যোগদান না-ও করে তারপরও নির্বাচন বিদেশিদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে! মন্ত্রী তার এই দাবির পক্ষে যুক্তিও তুলে ধরার চেষ্টা করেন। বলেন, বিএনপি অংশ না নেয়ার পরও যদি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, তবে অবশ্যই বিদেশিরা তা গ্রহণ করবে। মন্ত্রী বলেন, মিশরে বড় দল ছিল ব্রাদারহুড, তারা নির্বাচনে আসেনি, আফগানিস্তানে তালেবান আসেনি। নির্বাচনে বড় দলের অংশগ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ নয় এমন মন্তব্য করে পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, মিশর ও আফগানিস্তানের নির্বাচন যুক্তরাষ্ট্র গ্রহণ করেনি?
সরকার সব দলকে নিয়ে নির্বাচন করতে চায় জানিয়ে ড. মোমেন বলেন, আমরা চাই সবাই নির্বাচনে আসুক। যাতে আমরা আমাদের নিজেদেরও যাচাই করতে পারি। তাদের যদি কোনো জনসমর্থন থাকে তারা নির্বাচনে আসবে এবং প্রমাণ করবে তাদের অবস্থান।
নির্বাচন বানচালের চেষ্টাকারীদের মার্কিন ভিসানীতির আওতায় আনার আহ্বান জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রকে আমরা বলবো- যারা নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছে, তাদেরকে মার্কিন ভিসানীতির আওতায় নিয়ে আসুন। বিদেশিরা বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলায় এবং এর জন্য ঐতিহাসিকভাবে রাজনীতিবিদরা দায়ী মন্তব্য করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা চাইবো না বিদেশিরা আমাদের কোনও আভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাক। কিন্তু দুঃখজনক হলেও ঐতিহাসিকভাবে এটা সত্য যে, আমাদের রাজনীতিবিদরা এজন্য অনেকখানি দায়ী। আমাদের রাজনীতিবিরা কারণে-অকারণে বিভিন্ন মিশনে ধরণা দেন, একশটা চিঠি লিখেন।
বিদেশিদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর পথে উদ্বুদ্ধ করার জন্য মিডিয়াকেও দোষারোপ করেন মন্ত্রী। বলেন, মিডিয়াও এজন্য দায়ী। আমাদের কিছু বাঙালি বিদেশে আছেন। তারাও এজন্য দায়ী। এই কয়েকটি গোষ্ঠীর কারণে বিদেশিরা আমাদের নির্বাচন কিংবা অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলায়। মিডিয়ার বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে মন্ত্রী বলেন, প্রত্যেকদিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্রকে ত্যক্ত করে ফেলে এই বাঙালি সাংবাদিকরা, বাংলাদেশের ওপরে, অভ্যন্তরীণ ইস্যুর ওপরে প্রশ্ন করে। আপনাদের সাংবাদিকরা, আপনাদের পেশার লোকেরা এইসব করে। এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাতিসংঘের রাজনীতি বিভাগের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর ব্যর্থ বাংলাদেশ মিশনের প্রসঙ্গ টানেন। বলেন, তারানকো সাহেব কিছু করতে পেরেছিলেন? আমরা চাইব না, বিদেশিরা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করুক। তবে সহায়কের ভূমিকা পালন করলে স্বাগত জানাব।
অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, জনগণের যদি সম্পৃক্ততা থাকে, জনগণ যদি ভোট দেয়, তাহলে সেটা অংশগ্রহণমূলক। আমাদের প্রায় নির্বাচনে শতকরা ৫০ ভাগ লোক ভোট দেয়। আমেরিকায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সবসময় নির্বাচন হয়। সিনেটর কেনেডি, সিনেটর জন কেরি তাদের বিরুদ্ধে কেউ দাঁড়ায় না। সম্মানিত লোকের বিরুদ্ধে কেউ দাঁড়ায় না। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে ছিলোনা জানিয়ে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আমাদের একাত্তরে সমর্থন দেয়নি। তারা পাকিস্তান সরকারকে সমর্থন করেছে। কিন্তু আমরা ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতা পাওয়ার পর আমেরিকা প্রতিনিয়ত আমাদের সমর্থন দিয়ে গেছে। কোনো দিন আমাদের বিরুদ্ধে যায়নি। এটা কি বোঝায়, তারা আমাদের সঙ্গে আছে। মন্ত্রী বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অনেক দিন ধরে বলছে, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা। সম্প্রতি তারা সংঘাতমুক্ত নির্বাচনের দাবি তুলেছে। আমরাও তা-ই চাই। কিন্তু সেটা আমরা একা পারব না।
র্যাব প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আমেরিকা পরিণত সরকার। তারা জানে, র্যাব অত খারাপ কাজ করে না। আমেরিকা র্যাবকে সমর্থন করবে। হয়ত নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আমরা আইনি প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছি।
অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পরিস্থিতি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ড. মোমেন বলেন, আমাদের দেশের লোকেরা আগেভাগে দুশ্চিন্তা করে। আমরা বিদেশে যে জিনিসপত্র বিক্রি করি, কেউ আমাদের দয়া দেখায় না। সস্তায় ভালো জিনিস বিক্রি করি এবং যথাসময়ে ডেলিভারি হয় বলে তা ক্রয় করে, সুতরাং এসব বিষয়ে আমাদের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই।